কাঁচা বুট এর পুষ্টিগুণ- ডাঃ ফারহানা মােবিন

রমজান মাসে ইফতারের সময় জনপ্রিয় খাবার হলাে ছােলা বা বুট। আমাদের দেশে ছােলার ডাল নানাভাবে খাওয়া হয়। কাঁচা, রান্না করে মুড়ির সঙ্গে বা ডাল হিসেবে। বাজারে তেলে ভেজেও বিক্রি হয়। সবচেয়ে বেশি পুষ্টি হলাে কাঁচা | ছােলাতে।
রান্না ছােলাতে তেল দেওয়া থাকে বলে এতে ফ্যাটের পরিমাণ রয়েছে। মােটা ব্যক্তি বা উচ্চ রক্তচাপ আছে যাদের তারা কাঁচা ছােলা খান। তাদের জন্য অতিরিক্ত তেল, মসলা দেওয়া ছােলা হলাে ঝুঁকিপূর্ণ। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে রান্না ছােলা খেতে পারেন নির্দিষ্ট পরিমাণে। যারা খােসাসহ ছােলা খেতে পারেন না, তাদের জন্য কাঁচা ছােলা যথেষ্ট উপকারী। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রােটিন বা আমিষ। বুটের খােসাতে আছে ফাইবার। ফাইবার জাতীয় খাবার রক্তে চিনির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ছােলার প্রােটিন দেহকে করে দৃঢ়, শক্তিশালী, হাড়কে করে মজবুত, রােগ প্রতিরােধক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এর ভূমিকা অপরিহার্য। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম। যা দেহের হৃৎপিণ্ডের গতিকে সচল রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু কিডনির সমস্যা যাদের রয়েছে (ডায়ালাইসিস চলছে, রক্তে ক্রিয়েটিনিন, ইউরিক এসিড বা ইউরিয়ার পরিমাণ বেশি) তারা চিকিৎসক এর পরামর্শ ছাড়া যেকোনাে ধরণের ছােলা খাবেন না। | যেকোনাে ডালে পটাসিয়াম থাকে, যা রক্তে পটাশিয়াম এর পরিমাণ বাড়িয়ে তােলে। হাই ব্লাডপ্রেশার বা উচ্চ রক্তচাপ | এর রােগীরা সীমিত পরিমাণে ছােলা খাবেন। বাড়ন্ত শিশুদের দাঁত, হাড়, নখ, চুল, ত্বক এর পুষ্টির জন্য কাঁচা বা সিদ্ধ বুট ভীষণ উপকারী। তবে ছােটদের হজম শক্তি বড়দের তুলনায় দূর্বল থাকে। তাই তাদের জন্য সিদ্ধ বুট বেশি উপকারী। গর্ভবতী নারীদের জন্য ছােলা বয়ে আনবে সুফল। মায়ের পেটে থাকাকালীন সময় থেকেই শিশুর গঠনের জন্য আমিষ | অপরিহার্য।
তবে যেসব গর্ভবতী নারী উচ্চ রক্তচাপ, কিডনীর জটিলতা, । | উচ্চ মাএার ইউরিক অ্যাসিড এর সমস্যায় ভুগছেন, তারা চিকিৎসক এর পরামর্শ ছাড়া এফতারে ছােলা খাবেন না পুষ্টির আশায় বেশি ছােলা হিতে বিপরীত হবে। তাই বয়স ও উচ্চতা অধিক ওজন থাকলে ছােলা কম খাওয়া উচিত। করােনা মহামারীর জন্য লকডাউনের এই সময়ে হাঁটাচলার অভাবে যাদের ওজন বেড়ে গেছে, তারা ছােলা পরিহার করাই ভালাে। কাঁচা বা সিদ্ধ বুট এর পরিবর্তে ফল বা সালাদ এর পরিমাণ বেশি হওয়া উচিত। কাঁচা বা সিদ্ধ বুট রােগ প্রতিরােধ শক্তি বৃদ্ধি করে। তবে করােনা ভাইরাস এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, এই ধরনের যুক্তি | এখনাে কোন গবেষণা তে প্রমাণিত হয়নি।

আর নয় ঝুঁকিপূর্ণ ফাস্ট ফুড

ফাস্ট ফুড খুব মুখরোচক খাবার। এতে থাকে মেয়ানিজ, ঘি, মাখন, নানান রকম মশলা। অতিরিক্ত তেল, যা স্বাস্থ্যের জন্য সবসময় উপযুক্ত নয়। ফাস্ট ফুড হলো অতিরিক্ত পুষ্টিকর খাবার। যা শিশুদের জন্য দরকারি হলেও সব শিশুদের জন্য যৌক্তিক নয়। কিছু শিশু রয়েছে যারা বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী বেশি ওজন সম্পন্ন। পারিবারিকভাবে যাদের আত্মীয় স্বজনদের হার্টের অসুখ, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে চর্বি জমে খাবার প্রবণতা রয়েছে, তাদেরকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে।

এই ধরনের পরিবারের শিশুদেরকেও হতে হবে খুব বেশি সচেতন কারণ ছোট্ট বয়স থেকেও রক্তে চর্বি জমে যেতে পারে, বিশেষত যেসব শিশুদের খাবারের চাহিদা বেশি কিন্তু খেলাধুলা করার কোনো সুযোগ নেই। শুধু বাসা আর ক্লাসের মধ্যেই বন্দী থাকে, ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাব, মোবাইল ফোনের গেমস বা ভিডিও গেমস নিয়ে। এতে দৈহিক পরিশ্রমের অভাবে ছোটদের ওজন বেড়ে যায়। তাই ছোটদের ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য অবশ্যই খেলাধূলা করতে হবে।

 ‘শিশুদেরকেও হতে হবে খুব বেশি সচেতন কারণ ছোট্ট বয়স থেকেও রক্তে চর্বি জমে যেতে পারে, বিশেষত যেসব শিশুদের খাবারের চাহিদা বেশি কিন্তু খেলাধুলা করার কোনো সুযোগ নেই। শুধু বাসা আর ক্লাসের মধ্যেই বন্দী থাকে, ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাব, মোবাইল ফোনের গেমস বা ভিডিও গেমস নিয়ে।’  

আজকাল শিশুদের পুরো দেহের ওজনের থেকেও বেশি হয়ে গেছে তাদের বই খাতার ওজন। ছোটরা বঞ্চিত হচ্ছে খেলার মাঠ আর দৌড়াদৌড়ি থেকে। স্কুলের ক্লাস, কম্পিউটারের সামনে বসে থাকা, অনেক রাত জেগে পড়া আবর সকাল হলেই ব্যাগ ঘাড়ে নিয়ে স্কুলে ছুটে যাওয়াটা হয়ে গেছে তাদের নিত্য দিনের রুটিন। এইভাবে যেসব শিশুদের জীবন চলতে থাকে, তারা অকালেই বৃদ্ধ হয়ে যায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে আসে, কম বয়সেই চলে আসে মানসিক অবসাদ। পরিণামে অকালেই হার্ট অ্যাটাক, ডায়াবেটিস হতে পারে। হবেই এমন কোন বাধাধরা নিয়ম নেই। তবে হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

ছোটদেরও ডায়াবেটিস হতে পারে। তাই অধিক ওজন সম্পন্ন শিশুদেরকে ফাস্ট ফুড যতোটা পরিহার করা যায়, ততোই ভাল। আর যারা প্রচুর খেলার, দৌড়াদৌড়ি, ছুটোছুটির সুযোগ পায়, তাদের জন্য ফাস্ট ফুড ততোটা ক্ষতিকর নয়। তবে এই খাবারগুলো সীমিত হওয়াই ভালো। এসব খাবার হলো অতিরিক্ত পুষ্টিকর খাবার। আর যেসন শিশুদের হজম ক্ষমতা কম, তাদের অ্যাসিডিটি বা গ্যাসট্রিকের সমস্যাও হতে পারে।

তাই ছোট্ট বন্ধু তোমরা সবুজ ও হলুদ শাক সব্জি, মৌসুমী ফল, বাসার তৈরি খাবার, বাসার তৈরি ফলের জুস যতোটা পারো খাও। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। দেহে বাড়তি ফ্যাট বা চর্বি জমবে কম। কোমল পানীয়, এ্যানার্জি ড্রিংকস যতোটা বাদ দাও। খেতে মজা পেলেও, দেহের জন্য খুব ক্ষতিকর। তাই নিজের ভবিষ্যৎ রক্ষার জন্য তোমরা মনোযোগী হও। সুস্থ্য সবল হলে তোমরা দ্বিগুণ উৎসাহে কাজ করতে পারবে। ছোট্ট থেকেই তোমরা মনোযোগী হও নিজেদের প্রতি। তোমাদের জীবন হোক আলোকিত ও উজ্জ্বল।

লেখক : এমবিবিএস (ডি.ইউ), এমপিএইচ (ইপিডেমিওলজি-থিসিস পার্ট), রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসার (গাইনী এন্ড অবস্), স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা।
সিসিডি (বারডেম হসপিটাল)
farhanamobin31@yahoo.com

আমি সিগারেট বলছি

আমি একটি মাদকদ্রব্য। আমার নাম সিগারেট। আমি দেখতে বেশ সুন্দর। আমি বিড়ি নামেও পরিচিত। আমি সাদা কাগজে মোড়ানো। দেখতে কলমের মতো। আমাকে দেখতে শান্তির প্রতীকের মতো মনে হয়। কারণ আমি দেখতে সাদা। আমি খুব সহজলভ্য একটি মাদক। আমি পৃথিবীর সব দেশে, শহরে এবং গ্রামেও বিক্রি হই। আমি অনেক প্রাচীন একটি মাদকদ্রব্য।

যে কোন দেশের মানুষের মধ্যে আমি খুব দ্রুত নেশা তৈরি করতে পারি। ছোট, বড় নারী, পুরুশ যে কেউ আমার নেশাতে আক্রান্ত হয়। দুই থেকে তিন দিন কয়েকবার আমাকে গ্রহণ করলেই, আমি নেশাতে পরিণত হই। যে কোন দেশের, যে কোন পরিবেশের মানুষকে আমি সহজেই আসক্ত করে ফেলি। আমার অপর নাম ‘ধূমপান।’

আমার দেহের ক্ষতিকর পদার্থগুলো রক্তে মিশে নেশা তৈরি করে। রক্তে মিশে যাবার পরে মস্তিস্কের স্নায়ুগুলো বার বার ধূমপান করার জন্য মানুষকে বাধ্য করে। পরিণামে তীব্র নেশাতে পরিণত হয়। তখন ধূমপান হয়ে যায় জীবনের খুব জরুরি একটি অংশ। সিগারেটের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর পদার্থটির নাম হলো ‘নিকোটিন’। নিকোটিন দেহের রক্তের সাথে মিশে পুরো দেহের অভ্যন্তরীণ কার্যকলাপকে পরিবর্তন করে দেয়। তখন দেহ বার বার নিকোটিন কেই চায়। মানুষ না চাইলেও তখন নেশা হয়ে যায়। সিগারেট খাওয়া মানে ধূমপান। আর ধূমপান মানেই বিষপান। সারা পৃথিবী জুড়ে রয়েছে নানান রকমের সুন্দর সুন্দর প্যাকেটে আর বাক্সে ভরা সিগারেট। নামীদামী কোম্পানিরও রয়েছে প্রচুর সিগারেট। কিন্তু যতো বড়ো কোম্পানিরই হোক না কেন সিগারেট বা ধূমপান হলো বিষপান।

এই বিষপান দেহে তৈরি করে নিকোটিনের প্রতি নির্ভরতা। যা চাইলেও ছাড়া যায় না। মাত্র ৪-৫ দিন নিয়মিত খেলেই নেশা হয়ে যায়। তখন সিগারেট না খেলে ভালো লাগে না। মাথা জ্যাম হয়ে আসে। মাথা ঠিক মতো কাজ করছেনা। এই ধরনের অনুভূতি হয়।

অর্থাৎ সিগারেটের নিকোটিন দেহের মধ্যে এমনভাবে বাসা বেঁধে ফেলে যে, তখন নিকোটিন ছাড়া ভালো লাগেনা। দুর্বল লাগে, অস্বস্তি আর বিরক্তিতে মাথা ঘুরায়। অনেকের ভয়ঙ্কর মাথা ব্যথা শুরু হয়। যারা উচ্চ রক্তচাপের রোগী তাদের রক্তচাপ পর্যন্ত বেড়ে যায় বিরক্তি আর অস্বস্তির কারণে। ছোট্ট একটি জিনিস কিন্তু দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। একটি সিগারেট দেহের একবিন্দু রক্ত নষ্ট করে ফেলে। দেহের রক্তের মূল উপাদান হলো লোহিত রক্ত কণিকা। একটি সিগারেট একটি লোহিত রক্ত কণিকাকে দুর্বল করে দেয়। লোহিত রক্ত কণিকা দুর্বল হয়ে পড়লে মানুষও দুর্বল হয়ে যায়। তখন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে আসে। ফলে দেহে বাসা বাঁধে নানান রকমের অসুখ।

আমি ‘সিগারেট’ বলছি, তোমরা আমাকে ঘৃণা করো। আমার কোন ভালো দিক নাই। আমি শুধু তোমাদের ক্ষতিই করি। আমার উপকারী কোন গুণ নায়। এই পৃথিবীতে শুধু সিগারেট না, প্রতিটি মাদক দ্রব্যই হলো স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ খারাপ। মাদক দ্রব্য দেহের প্রতিটি অঙ্গের উপর ফেলে বিরূপ প্রভাব। ঘুনে ধরা কাঠের মতো মানুষকে দুর্বল করে দেয়। মৃত্যু এসে দ্রুত নিয়ে যায় না ফেরার দেশে।

আমি ‘সিগারেট’ বলছি। তোমরা আমাকে ঘৃণা করো। যারা আমাকে গ্রহণ করেছে, আমি শুধু তাদের না, যারা আমাকে গ্রহণ করেনি আমি তাদেরও ক্ষতি করি। যদি একটি বাসায় একজন ধূমপান করে, তবে অন্য যারা ধূমপান না করে তাদেরকেও হুমকির মুখে ফেলে দেয় ধূমপান। ধূমপান বলতে বিড়ি, সিগারেট, চুরুট, তামাক সব কিছুকেই বোঝায়। যে কোন প্রকারের ধূমপানই হলো বিষপান। গর্ভস্থ শিশুর জন্যও ধূমপান ভীষণ খারাপ। যেসব মা বাবা ধূমপান করেন, তাদের সন্তানেরাও হয় নানান রকম রোগের শিকার। অন্য শিশুদের তুলনায় তারা হয় দুর্বল ও কম মেধাসম্পন্ন। জীবন যুদ্ধে তারা পিছিয়ে পড়ে। কোন বাসায় একজন ধূমপান করলে ধূমপানের সময় নির্গত হওয়া বিষাক্ত গ্যাসের জন্য বাসার অন্যরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গর্ভবতী মায়ের শিশুরাও হয় বিভিন্ন অসুখের শিকার।

মায়ের পেটে থাকলেও তারা আক্রান্ত হয় বিভিন্ন জটিলতায়। যেমন নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই তাদের জন্ম হতে পারে, যাদেরকে বলে প্রিমেটিউর বেবি। অনেকের শ্বাসকষ্টও হয় জন্মের পূর্বে (পেটের মধ্যে) ও পরে (জন্মের সময় বা পরে)। ধূমপানের সময় নির্গত হওয়া বিষাক্ত গ্যাস বাতাসে মিশে পুরো পরিবেশকে করে তোলে বিষাক্ত। যা ছোট বড় সবার জন্য ক্ষতিকর। সিগারেট পুরো দেহের সব অঙ্গকে বৃদ্ধ করে তোলে। ত্বকে আনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। দেহের সবগুলো অঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে ফুসফুসকে। (ফুসফুস বুকের মধ্যে অবস্থিত দেহের একটি জরুরি অঙ্গ; যার মাধ্যমে আমরা নিঃশ্বাস নিই)।

দীর্ঘবছর প্রচুর পরিমাণে সিগারেট খেলে শ্বাসকষ্ট থেকে যক্ষা, ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। যারা ধূমপান করে তারা এ্যাকটিভ স্মোকার আর যারা ধূমপায়ীর পাশে থাক বা ধোয়া ধূমপায়ীর আশে পাশে যাদের মধ্যে পৌঁছে তারা হলেন প্যাসিভ স্মোকার। এ্যাকটিভ আর প্যাসিভ স্মোকার দুজনেই ব্যাপকভাবে খতিগ্রস্ত । তাই বিরত থাকুন ধূমপানসহ সব ধরনের মাদক থেকে।

ধূমপান, কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া, পরিবেশ দূষণে দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে কার্বন মনো অক্সাইড, ক্লোরোফ্লুরো কার্বন সব যাবতীয় ক্ষতিকর গ্যাসের পরিমাণ। এতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে আমরা বিভিন্ন শারীরিক মানসিক জটিলতার শিকার হচ্ছি। যা কখনোই কাম্য নয়।

আসুন আমাদের দেহ, মন, পরিবেশকে আমরা ভালো রাখি। ধূমপানসহ যাবতীয় মাদককে ‘না’ বলি। শুধু এই দেশ নয়, পুরো পৃথিবীকে ভালো রাখার জন্য আমরা ধূমপানকে ঘৃণা করি। আর শুধু সিগারেট নয় যে কোন মাদকদ্রব্য মানুষ ও পরিবেশ দুটোর জন্যই বিপদজনক। তাই আমি ‘সিগারেট’ তোমাদের আবারো বলছি- “তোমরা আমাকে ও সকল মাদক কে ঘৃণা করো”।

প্রলয় লেখক ফারহানা মোবিন

উড়ছে নীল মেঘ। পার্কের দূর্বা ঘাসগুলো বাতাসে দুলছে। স্নিগ্ধ বাতাসে ছুঁয়ে যাচ্ছে মন। বিরক্তির চোখে ‘অর্পিতা’ বারবার দেখছে ঘড়ি। বেলা ৬টা বাজে, কিছুক্ষণ পরেই সন্ধ্যা হয়ে যাবে। আমাকে বাসায় যাবার জন্য দৌঁড়াতে হবে। নইলে আন্টি আমাকে বাসায় ঢুকতেই দিবেনা। ওহ, কেন যে প্রলয় এখনো আসছেনা। এতো দেরি করলে আমায় বাসায় ফিরবো কখন।

পার্কের লেকের পাড়ে বসে আছে অর্পিতা। হঠাৎ পেছন থেকে কে যেন তার ঘন কালো চুলে বুলাতে লাগল মমতার স্পর্শ।
অর্পিতা- খবরদার তুমি আমার চুল স্পর্শ করবে না। এতো দেরি করে কেন আসলা? তুমি জানোনা, আন্টি আমার সাথে খুব খারাপ আচরণ করে।

 অর্পিতাকে বিয়ে দিতে চায় তার আন্টি (সৎ মা)। সৎমায়ের সাথে অর্পিতার বাবাও রাজি হন। এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর সাথে ঠিক হয় বিয়ে। প্রলয় দায়িত্ব নিতে চায় না 

দুই হাত জোড় করে ক্ষমা চাইলো প্রলয়। প্রলয়ের জোড়া হাতের কাছে হার মানল অর্পিতার অভিমান।
অর্পিতা- তুমি এতো দেরি করলে কেন?
প্রলয়- বিসিএস পরীক্ষার জন্য টাকা জমা দিতে গেছিলাম।
– কত টাকা লাগবে?
– ত্রিশ হাজার।
– সরকারী পরীক্ষা দিতে কি ত্রিশ হাজার টাকা লাগে।
– তুমিতো জানোনা, এখন সব কিছুর খরচ বেড়ে গেছে। একেকবার একেক সরকার আসে। আর নূতন নূতন খরচ বাড়ায়। তুমি কি চাওনা যে, আমি বিসিএস ক্যাডার হই?
– অবশ্যই চাই। আমি জাানি তোমার টাকার সমস্যা। তাই আমার হীরার এই নাম ফুলটা এনেছি। মারা যাবার আগে আম্মা আমাকে এটা দিয়েছিল।
– তুমি আমাকে এত দুর্লভ স্মৃতির জিনিসটা দিয়ে দিলা। তোমার কষ্ট হবে না।
– তুমি ভালো একটা চাকরি পেলে তো, আমারই সুবিধা। তাড়াতাড়ি আমরা জীবন শুরু করবো। মায়ের শেষ স্মৃতির থেকে আমার কাছে তোমার প্রতিষ্ঠা অনেক বেশি জরুরি। আমি তোমাকে ভালোবাসি।
প্রলয়ের নিজেকে খুব ছোট মনে হতে লাগলো। অর্পিতা মায়ের শেষ স্মৃতিটা পর্যন্ত তাকে দিয়ে দিচ্ছে। অথচ সে নানা ভাবে মিথ্যা বলে অর্পিতার কাছে টাকা নেয়। কিন্তু কি করবে প্রলয়? তার যে উপায় নাই।
প্রলয়- অর্পিতা তুমি যদি জানতে পারো যে, এই আমিটা আমি না, অন্যজন, তবে তোমার কেমন লাগবে?
– তোমার এই তুমি আর আমির প্রশ্ন শুনলে আমার কাছে অবাক লাগে! আমিটা আমি না এটা কোন ধরনের কথা? কি সব সাহিত্যের কঠিন কথা!
হঠাৎ সামনে হাজির ছোট্ট একটি মেয়ে। ধূলাতে জট বেঁধেছে তার চুলে। নোংরা কুঁচকে যাওয়া জামা আর দেহ ভরা ধূলা-বালি। করুণ কণ্ঠে চাইতে থাকে ‘৫টা টাকা’। প্রলয় মানি ব্যাগে হাত দিয়েই চিৎকার করে হায় হায়! আমার সব টাকা ছিনতাই হয়ে গেছে!
-ছোট্ট মেয়েটি প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যায়। কান্নাভেজা কণ্ঠে বলে, স্যার আমি আপনার টাকা চুরি করিনি, বিশ্বাস করেন।
প্রলয়- নারে তোকে চোর ভাবছিনা। মনে হয়, পকেট থেকে পড়ে গেছে।

অর্পিতার খুব মায়া হলো। মেয়েটার হাতে গুঁজে দিলো ১০০ টাকা। চোখ ছলছল করে উঠল মেয়েটির। মাথা নিচু করে, দৌড়ে চলে গেল।

দুই.
পরের দিন দুপুর বেলা পাগল প্রায় হয়ে ছুটে এসেছে প্রলয়। দুচোখ ফোলা, সিঁদুর লালচে। মেডিকেলের কলেজের ওয়েটিং রুমে বসে আছে প্রলয়। কলেজের অফিস রুম থেকে ডেকে পাঠানো হলো তাকে।

অর্পিতা- একি প্রলয়, তোমাকে এমন বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে কেন?
-আমার হোস্টেলের রুম থেকে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ক্যামেরা চুরি হয়ে গেছে। এই মাসের খরচ চালানোর ২০ হাজার টাকাও নাই হয়ে গেছে।
– কি বলছো তুমি!
– অর্পিতা, আমাকে এক লক্ষ টাকা ধার দিতে পারো?
– এতো টাকা! তুমি চিন্তা করো না, মার গহনা বিক্রি করে তোমাকে টাকা দিবো। আমি চাই তুমি ভালো থাকো।
– থ্যাংকস ডিয়ার, তুমি না থাকলে আমি পথে বসে যেতাম।
– প্রলয়, আমি তোমাকে ভালবাসি। আমি তোমাকে আলোর পথে নিয়ে যাবো।

৬ মাস পরের ঘটনা। মেডিকেলের ২য় বর্ষের ছাত্রী সে। অর্পিতাকে বিয়ে দিতে চায় তার আন্টি (সৎ মা)। সৎমায়ের সাথে অর্পিতার বাবাও রাজি হন। এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর সাথে ঠিক হয় বিয়ে। প্রলয় দায়িত্ব নিতে চায় না। বলতে থাকে তার অসহায়ত্বের কথা, বেকারত্বের কথা।

প্রলয় বলে- দেখো, আমরা দুজনেই এখনো ছাত্র, তোমার দায়িত্ব নেবার মতো যোগ্যতা এখনো আমার নায়। আমি প্রতি মাসে তোমার কাছে থেকে হাজার হাজার টাকা নিই। আমি কিভাবে তোমার দায়িত্ব নিবো?
অর্পিতা- আমরা দুইজনে টিউশনি করে সংসার চালাবো। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা হবেই।
ঘর বাঁধার স্বপ্ন আর প্রলয়কে হারানোর ভয়ে, অর্পিতা বাবার বাড়ি ছাড়ল। বিয়ের দুইদিন পূর্বে পালিয়ে গেল প্রলয়ের সাথে।

তিন.
সুসজ্জিত মনোরম একটি ফ্ল্যাট। ফ্ল্যাট ভর্তি কয়েকজন যুবতী মেয়েরা আধুনিক পোশাক আর উগ্র সাজে সজ্জিত সবাই। প্রতিটি কক্ষে নারী আর পুরুষ।

নম্বর দেয়া ৬টি কক্ষ। পছন্দমত তরুণীকে নিয়ে, টাকা জমা দিয়ে একেকজন পুরুষ ঢুকছে একেকটি কক্ষে। অর্পিতার মাথা ঘুরাতে থাকে।

তরুণীদের লিডার ভ্রূ উঁচু করে প্রশ্ন করে, গাধা তুমি, মেডিকেলের ছাত্রী হয়েও ভয়াবহ মাদকাসক্তকে চিনতে পারোনি! নেশার লোভে তোমাকে বোকা বানাত, আর তুমি টাকা দিতা। তোমার প্রলয়, তোমাকে এখানে বিক্রি করে দিয়েছে।

এই কথা শুনে মূর্ছা যায় অর্পিতা। জ্ঞান ফিরে নিজেকে দেখে হাসপাতালের বিছানায়। জোরে পড়ে যাওয়ার জন্য মাথা ফেটে যায়। জ্ঞান ফিরেই চিৎকার করে ওঠে সে। হাসপাতালের ডাইরেক্টর অর্পিতার বাবার বন্ধু। তিনি অর্পিতাকে ফিরিয়ে আনেন, এই নোংরা জগৎ থেকে। কিন্তু অর্পিতাকে গ্রহণে অস্বীকার করে তার বাবা মা।
অর্পিতার অভিভাবক হয়ে যায় ডাইরেক্টর স্যার। ঢাকা মেডিকেল কলেজের পোস্ট মর্টেম ক্লাসে যায় অর্পিতা। জীবন যুদ্ধে হেরে গেলেও, লেখাপড়ার যুদ্ধে প্রথম হয় সে।

ছোট্ট বেলা থেকেই বড় ডাক্তার হবার স্বপ্ন অর্পিতার। কাটাছেড়া, সেলাই, ড্রেসিং-এ ভীষণ দক্ষ সে। স্যার এর পাশে দাঁড়ায় সে। বেওয়ারিশ একটি লাশ উল্টো হয়ে পড়ে আছে চাটাইয়ের উপর। ডোম লাশটিকে সোজা করতেই, মুহূর্তেই নাই হয়ে যায় তার পৃথিবী। পায়ের তলা থেকে সরতে থাকে মাটি। চোখের পানি গড়িয়ে পড়তে থাকে গাল বেয়ে।

চোখের সামনে টুকরা টুকরা করে ফেলা হয় প্রলয়কে। হাতুড়ি দিয়ে ফাটানো হয় মাথা। পোস্ট মর্টেমের জন্য মগজ বের হতে থাকে ছিটকে। সহ্য করতে পারে না অর্পিতা। আবারো অজ্ঞান হয়ে যায়।

মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, রোহিঙ্গাদের দেখেছি

মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি পৃথিবীতে ছিলাম না। আম্মা, আব্বু আর দাদীর কাছে থেকে শুনেছি মুক্তিযুদ্ধের গল্প। সেই ঘটনা গুলো আর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুঃখ যেন একই সূত্রে গাঁথা। আমার জন্ম স্থান রাজশাহী। পদ্মা নদীর সাথে জড়িয়ে আছে, আমার হাজারো স্মৃতি। আব্বু প্রতিদিন ভোর বেলা হাঁটতে যেতো। আব্বুর সাতে আমিও হাঁটতে বের হতাম। রাজশাহীর পদ্মানদীর ধার দিয়ে শাহমুখদম মাযার এর পাশে, তারপর পায়ে হেঁটে কুমার পাড়া, বড়রাস্তার মোড়, বিসমিল্লাহ হোটেল, রহমানিয়া হোটেল এর পাশ দিয়ে পায়ে হেঁটে আমি আর আমার বাবা বাসায় ফিরতাম।

আব্বু ঝরের বেগে হাঁটতো, আর আমি দৌড়াতাম। আব্বুর সাথে হাঁটার প্রতিযোগিতায় আমি যেতাম হেরে। হাঁটতে যেয়ে খুব ক্লান্ত হলে, আব্বু মাঝে মাঝে পদ্মা নদীর ধারে বসতো। পদ্মা পাড়ে মানুষজনের বসার জন্য সিমেন্টের বড় বড় স্লাব ছিল। মাথার উপরে ছিল বিশাল বড় পাকুর আর বট গাছ। সেই বট গাছে ভোর বেলা অজানা সব পাখিতে ভরে যেতো। অদ্ভুত সুন্দর সব পাখির কলকাকলি।

 আমাদের দেশের জনগণের ঘাড়ে মিয়ানমার সরকার কৌশলে বিপদ চাপিয়ে দিয়েছেন। কিছুদিন পূর্বে মায়ানমার সেনাবাহিনীর প্রধান বলেছিলেন, রোহিঙ্গারা বাঙালি। তারা কখনোই বাঙালি না 

আব্বু মাঝে মাঝে গাছ তলায় বসতো। উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো নদীর চরের বুকে। আর প্রায়ই বলতো “মা রে, মুক্তিযুদ্ধের সময় এই পদ্মা নদীর চর দিয়ে হেঁটে হাজার হাজার মানুষ ইন্ডিয়া তে গেছে। বাড়ি ঘর, জমি জমা ফেলে প্রাণের ভয়ে পালিয়ে গেছিল। মাথার উপর বোঝা নিয়ে, বয়স্ক মা বাবাকে ঘাড়ে নিয়ে পার হয়েছিল এই পদ্মা নদীর চর। চোখের সামনে কতো জন যে, গুলি খেয়ে মরেছে। সেই লাশ গুলোকে নিরুপায় হয়ে রাস্তায় ফেলে যেতে হয়েছে। চোখের সামনে ক্ষুধার্ত শুকুন লাশ গুলোকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেয়েছে। অর্ধমৃত মানুষকেও লাশ ভেবে ভয়াবহ ক্ষুধার্ত শকুনেরা টেনে হিঁচড়ে ছিঁড়ে খেয়েছে।

লুকিয়ে ঝোপ ঝাড়ের মধ্যে থেকে সেসব দৃশ্য দেখে চোখের পানি ফেলেছি। হাজার হাজার মাইল হাঁটতে যেয়ে, অনেক মায়ের কোলে থেকে পড়ে গেছে তার নতুন সন্তান। ভীড়ের মধ্যে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মা রে, এমন হাজার হাজার স্মৃতি এই পদ্মার চরে। আমি এই গাছ তলায় এসে বসলেই সেই স্মৃতি গুলো আমার মনে পরে। কথা গুলো বলতে বলতে আমার আব্বুর চোখ লাল হয়ে যেত।” পদ্মা নদীর ধারে গেলেই মনে হয় আমার আব্বুকে যেন দেখতে পাচ্ছি। আমার কাজ পাগল পিতা দ্রুত গতিতে হেঁটে চলেছে। আর সেই আমি তার সাথে সাথে দৌড়াচ্ছি।

অসহায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেখে আমার স্মৃতিপটে বার বার ভেসে উঠছে, সেই পদ্মা নদীর ঘটনা গুলো। চোখ বন্ধ করলেই যেন দেখতে পাচ্ছি। প্রাণের ভয়ে পালিয়ে আসা অসহায় মানুষগুলোকে পাকসেনারা বুটের জুতো দিয়ে লাথি মারছে। ছোট শিশু গুলোকে ছুঁড়ে আগুনে ফেলে দিচ্ছে। জ্বালিয়ে দিচ্ছে বাড়ি ঘর। কৌশলে নিজেদের মিয়ানমার সরকার দেশের ঝামেলা আমাদের ঘাড়ে ফেলে দিয়েছে।

এই বিপুল পরিমাণ শরণার্থীকে সীমান্তে ঢুকতে না দিলে, গুলি করে মারতে হতো। আওয়ামী লীগ সরকার যথেষ্ট উদারতার পরিচয় দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত অসংখ্য রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন। কিন্তু আমরা নিজেরাই গরীব দেশের মানুষ। এতো গুলো মানুষের জন্য আমরা মমতার আঁচল বিছিয়ে দিয়েছি। আমাদের দেশের সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান, এনজিও রোহিঙ্গাদের জন্য এগিয়ে এসেছেন। জাতিসংঘ সহযোগিতা করছে। কিন্তু এইটা স্থায়ী কোন সমাধান না। এই ভাবে চলতে পারেনা। জাতিসংঘকে চাপ দিতে হবে, মিয়ানমার সরকারকে, এই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য।

আমরা নিজেরাই উন্নয়নশীল একটা দেশ। আমরা নিজেদের সমস্যাই মেটাতে পারি না। মাত্রাতিরিক্ত জগণের জন্য আমরা নিজ দেশের জনগণের কর্মসংস্থান করতে পারি না। বেকারত্বের সমস্যার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে অন্যান্য সমস্যা গুলো। এই ভাবে চলতে পারে না। আমাদের দেশের জনগণের ঘাড়ে মিয়ানমার সরকার কৌশলে বিপদ চাপিয়ে দিয়েছেন। কিছুদিন পূর্বে মায়ানমার সেনাবাহিনীর প্রধান বলেছিলেন, রোহিঙ্গারা বাঙালি। তারা কখনোই বাঙালি না। তারা ছয়শো বছর ধরে আরাকান রাজ্যে বসবাস করে। তারা সবাই দরিদ্র না। তাদের অনেকেই আছেন, যারা বিত্তশালী। কিন্তু নিরুপায় হয়ে পলিথিনের ঘরে থাকছেন, ত্রাণের খাবার খেয়ে, না খেয়ে দিন পার করছেন। যা মানবতার চরম অবমাননা। এই মানুষ গুলোর অনেকেই এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত। অনেকেই গর্ভবতী। এই ভয়ানক পরিবেশে জন্ম নিচ্ছে অসহায় নবজাতক গুলো। এই অবস্থা চলতে দেয়া যায় না।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতিসংঘ, মিয়ানমার সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এইভাবে চলতে পারেনা। এতো গুলো মানুষের দায়িত্ব আমাদের দেশ কিভাবে নেবে? দেশের সকল স্তরের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমাদেরকে আরো জোরালো ভাবে জনমত তৈরি করতে হবে। রোহিঙ্গারা তাদের দেশে ফিরে যাক, তাদের দেশের সমস্যা তারা মিটিয়ে ফেলুক, এই আমাদের কামনা। আমরা আর কোন মুক্তিযুদ্ধ দেখতে চাইনা। আমরা আর কোন লাশের গন্ধ পেতে চাইনা। অসহায় মানুষগুলোর জন্য আমাদের রয়েছে গভীর সমবেদনা। আমরা চাই, ফিরিয়ে দেয়া হোক তাদের নাগরিক অধিকার।

আমরা আর কোন রোহিঙ্গাকে কষ্টের সাগরে দেখতে চাই না। আর কোন মুক্তিযুদ্ধ আমরা চাইনা। যুদ্ধ মানেই ধ্বংস। আমরা শান্তি চাই, আমরা চাই, পৃথিবীর প্রতিটি দেশ ভালো থাকুক। বন্ধ হোক রাখাইন রাজ্যের এই ভয়ানক নৃশংসতা। ফিরিয়ে দেয়া হোক, তাদের নাগরিক অধিকার।

আমার নাম হিজড়া

আমার কোনো নাম নেই,
তোমরা আমার নাম দিয়েছো ” হিজড়া “,

“হিজড়া ” মানে হাসির কিছু,
সমাজের খুব ফেলনা কিছু,

অথচ, এই আমি টা একজন মানুষ ।
একজন রক্ত মাংসের মানুষ,
আমাদের ইচ্ছে আছে,
আমাদেরও কষ্ট আছে ।

আমাদের ইচ্ছে গুলো কে
তোমরা লাথি মেরেছো,
আমাদের ভাতের থালা
তোমরা কেড়েছো ।

তোমাদের মিটিং মিছিলে
নেয়, আমাদের কোনো কথা,
তোমাদের হাতে আজ
ঠুনকো মানবতা !

তোমরা বুক পেতে
দিয়েছো রোহিঙ্গাদের জন্য,
আর সকল ঘৃণা,
শুধু আমাদের জন্য ।

চেয়ে দেখো, আমাদের অভাব আর শূন্য ভাতের থালা,
আমরা তোমাদের
পথ ঘাটের ধুলা ।

আমরাও মানুষ, বলে দাও,
আমরা কি খাবো?
কোথায় থাকবো,
কার কাছে যাবো?

তোমরা যদি পর দেশের
মানুষ কে ভালোবাসো,
তবে কেন আমাদের কে
ফেলে দিয়েছো?
আমরা রাস্তার ধূলোবালি,
আমরা তোমাদের হাসির কিছু।

দেখে যাও বন্ধু, আমাদের
মন জুড়ে হাহাকার,
জীবন জুড়ে শূন্য আর
তীব্র অনাহার।

তোমরা আমার নাম দিয়েছো
” হিজড়া ” ।

হিজড়া মানে অপমানের কিছু,
হিজড়া মানে চরম আঘাত,
হিজড়া মানে বঞ্চনা আর ঘৃণা ।

যদি হাসতে হয়, তবে সমাজের
ভণ্ড নেতাদের দেখে হাসো,
যদি ঘৃণা করতে হয়, তবে সমাজের মিথ্যা কে ঘৃণা করো ।
আমাকে ঘৃণা নয়।

আমার নাম হিজড়া।
আমি তোমাদের মতই মানুষ,
আমি এই সমাজের একজন,
এই দেশের একজন,
আমি এই পৃথিবীরই একজন ।

আমি একজন মানুষ ।
আমি এক শূন্য বালুচর ।
আমার ভাতের থালা ভরা
অবারিত চোখের জল।

সাফল্যের মশাল হাতে এগিয়ে যাক শিলা

চোখ ভরা স্বপ্ন আর বুক ভরা আশা ছিল মেয়েটির। শৈশব থেকেই স্বপ্ন দেখত আকাশ ছোঁয়ার। সরকারি চাকরিজীবী বাবা মৃত আব্দুস সাত্তারের আদর্শে লালিত তৃতীয় সন্তান শিলা। শৈশব থেকেই লেখাপড়া, গান, নাচ, কবিতা আবৃত্তি, উপস্থাপনায় ছিলেন ভীষণ পারদর্শী। তার মা চেয়েছিলেন তিনি যেন সব দিকে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। আর তাই ছোটবেলা থেকে সেভাবেই গড়ে তুলেছিলেন তিনি।

সিরাজগঞ্জের নিরিবিলি সবুজের মাঝে তিনি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন আকাশ ছোঁয়ার। সিরাজগঞ্জের সালেহা ইসহাক সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং রাশিদাদ জোহা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন।

বাবা মারা যাওয়ার পর পরিস্থিতি কিছুটা এলোমেলো হয়ে যায়। নাম লেখাতে ব্যর্থ হন সরকারি মেডিকেল কলেজে। বাবা-মা ও পরিবারের সবার প্রচণ্ড ইচ্ছা ছিল তিনি চিকিৎসক হবেন। চিকিৎসা ক্ষেত্রে রাখবেন বিশেষ অবদান। সবার স্বপ্নকে সত্যি করার জন্যই তিনি ভর্তি হন নগরীর রায়েরবাজারের শিকদার মহিলা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালে।

শৈশব থেকেই স্বপ্ন দেখতেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়বেন। স্বনামধন্য চিকিৎসক হবেন। কিন্তু সরকারি মেডিকেল কলেজে সুযোগ না পাওয়ার জন্য তার মনের প্রতিজ্ঞা আরও দৃঢ় হয়ে ওঠে। তিনি মনস্থির করেন, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে লেখাপড়া করলেও সরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের মতো যোগ্য হবেন।

মেডিকেল জীবনের তিনটি বোর্ডের পরীক্ষায় তিনি কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। মেডিকেল কলেজের ছাত্রী থাকা অবস্থায়ই প্রশংসিত হতে থাকেন শিক্ষক-শিক্ষিকার কাছে। উচ্ছ্বল প্রাণবন্ত ব্যবহার, ক্লাসের শিক্ষার্থীদের প্রতি সহমর্মিতার জন্য তিনি হয়ে উঠলেন সবার প্রিয়। ২০১১ সালে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। নিষ্ঠার সাথে সম্পন্ন করেন ইন্টার্নির দীর্ঘ এক বছর। ইন্টার্নি শেষে যোগদান করলেন একই মেডিকেল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগের প্রভাষক হিসেবে।

এরপর মেডিকেল কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন নগরীর ল্যাব এইড হসপিটাল এবং মডার্ন মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালে। স্বপ্ন দেখেন সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক হওয়ার। কিন্তু সময়ের ডানায় ভর করে সেই স্বপ্ন পরিবর্তিত হয়। তিনি ২০১৪ সালে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। প্রথম পোস্টিং ছিলো সিরাজগঞ্জে।

সিরাজগঞ্জের কামারখন্ড উপজেলায় কর্মরত অবস্থায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টিতে আসেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের তত্ত্বাবধানে ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রাম (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে) আয়োজিত হয়। এই কর্মসূচির আওতায় যাদের নেতৃত্বের ক্ষমতা রয়েছে, তাদের থেকে পুরো বাংলাদেশে দশ জন বিসিএস ক্যাডারকে নির্বাচিত করা হয়। যারা নেতৃত্ব ও প্রযুক্তিতে বিশেষ দক্ষ। সারা দেশ থেকে দশ জন বিসিএস ক্যাডার নিয়ে কো-অর্ডিনেশন পলিসি প্ল্যানিং তৈরি করা হয়। সেই মেধাবী দশ জনের একজন হলেন চিকিৎসক শিলা।

DR-SHILA-AHSAN

আমেরিকা ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে তিন মাসের এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। ইউএসএসিডিসি’র (USA Center for Disease Control) অধীনে তিন মাসের কর্মশালাতে অংশগ্রহণ করেন অসংখ্য চিকিৎসক। এ কর্মশালায় চিকিৎসক শিলা উপলব্ধি করেন, তিনি জনশক্তি বিষয়ক কাজে সংযুক্ত থাকলে, মানুষের উপকার করতে পারবেন বেশি। কর্মশালাতে আমেরিকা ও বাংলাদেশের উচ্চপদস্থ জনশক্তির সংযোগ ঘটে। এতে তিনি সবার নজর কাড়েন। নেতৃত্ব, ইংরেজিতে উপস্থাপনা, বন্ধুসুলভ আচরণের জন্য তিনি দেশ-বিদেশের জনশক্তির কাছে সমাদৃত হন। এ কর্মসূচি বিশ্বের ২২টি দেশে অনুষ্ঠিত হয়। কর্মসূচির পর থেকে তিনি জনস্বাস্থ্য বিষয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। এছাড়া অ্যানথ্রাক্সের উপরেও কাজ করেন তিনি।

সরকারি চাকরিতে যুক্ত হওয়ার পর থেকেই উপলব্ধি করেন, বিদেশ থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করলে, তিনি আরো দক্ষ হবেন। দেশকে সেবা দিতে পারবেন আরো বেশি। চাকরির পাশাপাশি আইইএলটিএস করেন এবং ভালো স্কোর পেয়ে ফিনল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ ট্যামপেরিতে ডক্টরেট প্রোগ্রামে এপিডেমিওলজিতে পড়ার সুযোগ পান। ফিনল্যান্ডের এই ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ পাওয়ার জন্য ডা. শিলার সাথে তাঁর স্বামীও ফিনল্যান্ডে থাকার অনুমতি পেয়েছেন।

এবছরের ১ আগস্ট থেকে শুরু তবে তাঁর ডক্টরেট ডিগ্রির ক্লাস। তিনি একইসঙ্গে ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশনের একমাস ব্যাপী ক্যান্সার গবেষণার জন্য কর্মশালার উপরে ফ্রান্সের বৃত্তি পান। আগামী জুন থেকে জুলাই পর্যন্ত এই কর্মশালা। ক্যান্সার নিরাময়, প্রতিকার, দ্রুত নির্ণয়ের বিষয়ে একমাস ব্যাপী কর্মশালা এবং সম্প্রতি ভারতের মহালি থেকে একমাসের (পাঞ্জাব) প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। তাঁর প্রশিক্ষণের বিষয় ছিল, ‘স্পেশ্যালাইজ ট্রেইনিং প্রোগ্রাম ইন হেলথ কেয়ার টেকনোলজি ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং।’

বর্তমানে তিনি স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তা। তাঁর এই সফলতার জন্য তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ত্রী ও প্রসূতি বিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আশরাফুন নেশা পিয়া এবং অধ্যাপক ফাতেমা আশরাফের নাম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।

তাঁর সহকর্মী চিকিৎসক রুবাইয়াত, চিকিৎসক আরাফাত, অস্ট্রেলিয়ার নিউ ক্যাসেল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক মিলটন এবং স্বামী রাগিব আহসানের কাছে ভীষণভাবে কৃতজ্ঞ। তাঁর সফলতার জন্য পরিবারের পাশাপাশি, স্বামীর অবদান অপরিহার্য। এছাড়া ডা. দিলীপ কুমারের দিক-নির্দেশনা তাঁর সফলতার জন্য বিশেষ অবদান রেখেছে।

ডা. শিলা বলেন, ‘আমাদের সমাজে নারীরা যদি পরিবার ও শ্বশুরবাড়ির সহযোগিতা সঠিকভাবে পায় তাহলে তারা আরো বেশি সফল হবে।’

উন্নত বিশ্বে দেশের পতাকা ওড়ানোর স্বপ্ন দেখেন তিনি। জয় হোক ডা. শিলার। সাফল্যের মশাল হাতে তিনি এগিয়ে যাক।

রমজানে দূর হোক পানিশূন্যতা

পানি দেহের জন্য ভীষণ জরুরি। শুধু রমজান নয়, পুরো বছরজুড়ে প্রচুর পানি পান করুন। পানি দেহের প্রতিটি অঙ্গের জন্য সুফল বয়ে আনে। আমাদের দেহের ভেতরে কোন দাঁত নেই। তাই খাবার ভালোভাবে হজম হওয়ার জন্য প্রতিদিন গড়ে দেড়-দুই লিটার পানি পান করাটা খুবই দরকার। পানি খাবারের সাথে মিশে খাবার হজমে সাহায্য করে।

আমাদের দেহের অতি প্রয়োজনীয় একটি অঙ্গের নাম হলো কিডনি। কিডনি দেহের ছাকন যন্ত্রের মতো কাজ করে। দেহের জরুরি উপাদানগুলোকে রেখে অপ্রয়োজনীয় অংশগুলোকে সূত্রের সাহায্যে শরীরের বাইরে বের করে দেয়। এই অঙ্গ আমাদের পেটের দুইপাশে দুইটি রয়েছে। প্রচুর পানি খেলে কিডনি কাজ করে ভালোভাবে। তবে কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া পানি খাওয়াটা অনুচিত।

বেশি করে পানি পান করুন। রমজানে অবশ্যই পানি শূন্যতা দূর করবেন। তাহলে আসুন জেনে নেই পানি পানের উপকারিতা-

অ্যাসিডিটির প্রধান ওষুধ
প্রচুর পানি খেলে অ্যাসিডিটি বা গ্যাসট্রিকের পরিমাণ কমে যায়। বুকে জ্বালাপোড়া, বমি বমি ভাব, টক ঢেকুর ওঠা, পেটে ব্যথা, বুকে আলপিনের মতো খোঁচানো ব্যথা, পিঠে ব্যথাও কমে যায়। খাবার সঠিকভাবে হজম না হওয়ার জন্য এমন হয়।

দেহের চর্বি কমায়
রমজানে তেলে ভাজা খাবার খাওয়া হয় বেশি। তাই ইফতারের পর থেকে সাহরি পর্যন্ত প্রচুর পানি পান করুন। পানি দেহের ফ্যাট সেলগুলোকে কমিয়ে দেয়। ফলে ওজন কমাতে সুবিধা হয়। যারা প্রচুর খাবার নিয়ন্ত্রণ ও ব্যায়াম করে, ওজন কমাতে চায়, তাদের নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার ও প্রচুর পানি পান করা উচিত।

জন্ডিসের জন্য অপরিহার্য
প্রচুর পরিমাণ পানি দেহের বিলিরুবিনের মাত্রা কমিয়ে দেয়। বিলুরুবিন হলো রক্তের একটি জরুরি উপাদান। যা নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে বেড়ে গেলে জন্ডিস হয়ে যায়। আবার গলব্লাডার বা পিত্তথলির কাজকর্ম সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য পানি পান করা দরকার।

ব্রণ দূর করতে
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করার জন্য পানি খুব দরকার। পানি নিয়মিত খেলে খাবার ঠিকমতো হজম হয়, ব্রণও ভালো হয়। পুরো দেহে রক্ত চলাচল ঠিকমতো হওয়ার জন্য ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় থাকে।

গর্ভবতীদের জন্য
গর্ভস্থ শিশু পেটে পানির থলের মধ্যে থাকে। নিয়মিত পান করলে সেই পানির ব্যাগটি ভালো থাকবে।

যেকোন অপারেশনের পরে
পানি পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হওয়ার জন্য কাটা জায়গায় চাপ লাগবে না। রক্ত ঠিকমতো চলাচলের জন্য কাটা জায়গা দ্রুত শুকাবে।

অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বজায় রাখে
ঘাম ও প্রস্রাবের সাহায্যে দেহের দূষিত তরল পদার্থকে বাহিরে বের করতে সাহায্য করে পানি। এতে অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বজায় থাকে, হাত-পায়ের তলায় জ্বালাপোড়া কমবে। যাদের বারবার প্রস্রাবে ইনফেকশন হয়। তারা প্রচুর পানি পান করুন।

অন্যান্য ক্ষেত্রে
মাতৃদুগ্ধদান কালীন, অতিরিক্ত গরমে দেহের লবণ পানির সাম্যাবস্থা বজায় রাখার জন্য, ডায়াবেটিক ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের হৃৎপিণ্ড ভালোভাবে কাজ করার জন্য প্রচুর পরিমাণ পানি পান করাটা জরুরি। জন্মনিয়ন্ত্রণকারী পিল খান, এমন নারীরা প্রচুর পানি পান করুন। কৌটার দুধ খায়, এমন শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য হয় খুব বেশি। এই অবস্থা দূর করার জন্য প্রচুর পানি দরকার। দীর্ঘক্ষণ চোখ বা মস্তিষ্কের কাজ করার পরে পানি খেলে, মস্তিষ্কের প্রতিটি স্থানে রক্তের সাথে পানি পৌঁছে কর্মক্ষমতা বাড়ায়। রক্তে ইনফেকশনের (ইএসআর) পরিমাণ কমায়।

লেখক : রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসার (গাইনি অ্যান্ড অবস), স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা এবং ডায়াবেটোলোজি, বারডেম হাসপাতাল।

কেন করবেন ধ্যান

নানা রকমধ্যানে হয় মস্তিষ্কের বিশ্রাম, এতে বাড়ে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা। ছবি: অধুনা চাপে অনেক নারী কম বয়সে ডায়াবেটিসে ভোগেন। দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ রক্তে ডায়াবেটোজেনিক হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ডায়াবেটোজেনিক হরমোন ডায়াবেটিস তৈরির অন্যতম প্রধান ফ্যাক্টর বা নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে রক্ষার জন্য মানসিক চাপমুক্ত থাকাটা খুব জরুরি। তখন করতে পারেন ধ্যান বা মেডিটেশন।
আমাদের দেশের শহরাঞ্চলের খুব সচেতন কিছু নারী ধ্যান বা মেডিটেশন করেন। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই নগণ্য। মেডিটেশন বা ধ্যান মস্তিষ্কের জন্য খুব উপকারী। আমাদের মস্তিস্ক সব সময় কাজ করতে থাকে। আমরা যখন ঘুমিয়ে থাকি তখনো কাজ করে। মস্তিষ্ক সারা শরীরের নিয়ন্ত্রক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। অর্থাৎ বিরামহীন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে। আমাদের ঘুমানোর সময়, চোখ বন্ধ করে রাখার সময় বা ধ্যান করার সময় মস্তিষ্কের বিশ্রাম হয়। এই বিশ্রামের ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ে। তখন সারা শরীরের নিয়ন্ত্রণক্ষমতা হয়ে ওঠে আরও বেশি শক্তিশালী।

ধ্যান বা মেডিটেশনের সময় মানুষ চোখ বন্ধ করে রাখে। ফলে চোখ, কপাল, ঘাড়, মাথা, চোখের চারপাশের স্নায়ু ও মাংসপেশির বিশ্রাম হয়। ধ্যানের সময় মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষেরও বিশ্রাম হয়। তখন মাথাব্যথা, ঘাড়ব্যথাও কমে। মস্তিষ্কের প্রতিটি প্রান্তে অক্সিজেন পৌঁছে যায়। এই অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত শিরা–উপশিরার মাধ্যমে সারা শরীরে সঞ্চালিত হয়। এতে শরীরের অন্যান্য অঙ্গেরও পুষ্টি হয়। অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত দেহের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। পরিণামে কমে যায় স্ট্রেস হরমোন বা ডায়াবেটোজেনিক হরমোন।
পরিণত বয়সের সব নারী–পুরুষের জন্য মেডিটেশন খুব জরুরি। আমাদের উচিত কর্মক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নিজেদের ধ্যান করা, আত্মীয়স্বজনসহ প্রতিবেশী পরিচিতদের এতে উৎসাহিত করা।
মস্তিষ্কের বিশ্রাম হলে এতে অক্সিজেনের মাত্রা বেড়ে যায়, তখন অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পুরো শরীরে সঞ্চালিত হয়। চোখের স্নায়ুগুলোর বিশ্রাম হয়। চোখ বন্ধ করে ধ্যান করার সময় চোখের মাংসপেশিরও বিশ্রাম হয়। নিয়মিত মেডিটেশন করলে হৃদ্রোগের ঝুঁকিও কমে।
মেডিটেশনের গুরুত্ব সম্পর্কে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মহাজাতক সব সময় বলেন প্রত্যেক মানুষকে নিয়মিত মেডিটেশন করার জন্য। ধ্যান মানুষকে তার মন ও চিন্তা–চেতনা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, বাড়িয়ে তোলে আত্মবিশ্বাস।