ফারহানা মোবিন এর লেখা “উড়ে যায় মুনিয়া পাখি” “গোলাপি রঙ পেন্সিল”(ভিডিওসহ)

২০২০ এর অমর একুশে গ্রন্থমেলা। লেখক, পাঠক আর বিভিন্ন বয়সের মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এর এই গ্রন্থমেলা।

এইবারের বই মেলায় লেখক ও চিকিৎসক ফারহানা মোবিন এর লেখা শিশুতোষ গল্পের বই “গোলাপি রঙ পেন্সিল” এবং ২০১৪ সালে প্রকাশিত “উড়ে যায় মুনিয়া পাখি”। বইটি পাওয়া যাবে ছোটদের বই প্রকাশনীতে।‌ স্টল নং — ৭৩৯।

ডাঃ ফারহানা মোবিন সাত বছর ঢাকার পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতালে স্ত্রী ও প্রসূতি বিভাগের মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
পেশায় চিকিৎসক হলেও সামাজিক কাজ কর্ম, লেখালেখি করেন নিয়মিত। চতুর্থ শ্রেণী থেকে লেখা শুরু করেন।

পঞ্চম শ্রেণী থেকে তার লেখা ছাপা শুরু হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে ।তিনি শৈশব থেকেই শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির সাথে জড়িত।
একটানা সাত বছর তিনি ছিলেন দৈনিক প্রথম আলো‌ নিউজ পেপার এর প্রদায়ক লেখক।

নারী ও শিশু উন্নয়ন, সামাজিক সমস্যা, স্বাস্থ্য সচেতনতা,জীবনযাপন, সাহিত্য বিষয়ক লেখেন।
দেশ বিদেশের অগণিত সংবাদপত্র, ম্যাগাজিনে তিনি নিয়মিত লেখেন। তার লেখা স্বাস্থ্য বিষয়ক বই গুলো পাওয়া যাবে, বিদ্যা প্রকাশনী থেকে।

বই গুলো হলো-
১. শরীর স্বাস্থ ও পুষ্টি (২০১২)
২. সবার আগে স্বাস্থ্য (২০১৩)
৩. আসুন সুস্থ থাকি’ (২০১৮)

২০২০ সালে বিদ্যা প্রকাশনা থেকে সামাজিক সমস্যা ও তার প্রতিকার বিষয়ক বই “আমিও মানুষ” প্রকাশিত হয়েছে।
বিদ্যা প্রকাশনার স্টল নং – ২৬৬, ২৬৭, ২৬৮, ২৬৯।

তার লেখা ছোটদের বই গুলো সব বয়সের পাঠকের পড়ার উপযোগী। শিশুতোষ দুইটি বই এর প্রচ্ছদ ও অলংকরণ করেছেন চিত্র শিল্পী বায়েজীদ সোহাগ। প্রকাশক সালমা রেহানা।

বই মেলা শেষ হলেও বইটি পাওয়া যাবে রকমারি ডট কম থেকে। শিশু উন্নয়ন মূলক এই বই দুইটি সহজ সরল ভাষায় লেখা।
ডাঃ ফারহানা মোবিন বিভিন্ন সময়ে টিভি চ্যানেলে স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ক অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করেন।

তিনি মরণোত্তর তাঁর দুই চোখ, হার্ট, লিভার, ফুসফুস, কিডনী ও প্যানক্রিয়াস দান করেছেন। নানাবিধ সামাজিক কাজকর্মের সাথে সংযুক্ত তিনি।

ফারহানা মোবিনের জন্ম ২৭ জুন রাজশাহী শহরে। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। সরকারি পিএন গার্লস হাইস্কুল থেকে এসএসসি ও রাজশাহীর নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন।

ঢাকার শিকদার উইমেন্স মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল থেকে এমবিবিএস পাশ করেন। তিনি উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনে এখনো লেখাপড়া করছেন। পাবলিক হেলথ এ গবেষণারত। বারডেম হাসপাতাল থেকে ডায়াবেটিস এবং হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল থেকে হৃদ রোগের উপর সার্টিফিকেট কোর্স সম্পন্ন করেছেন। তার মা ফেরদৌসী বেগম এবং পিতা মরহুম আবদুল মোবিন। অসহায় মানুষের ফ্রী চিকিৎসা, সমাজ সচেতনতা মূলক লেখা, টিভি চ্যানেলে অনুষ্ঠান এবং বহুবিধ সামাজিক কাজের জন্য তিনি অর্জন করেন- বিজেম সম্মাননা অ্যাওয়ার্ড ২০১৯, উইবিডি সম্মাননা অ্যাওয়ার্ড ২০১৮, স্বাধীনতা সংসদ আলোকিত নারী সম্মাননা অ্যাওয়ার্ড ২০১৯।

“সিড়ি বেয়ে ওঠা নামার গুরুত্ব “

করােনা ভাইরাসের জন্য সারা পৃথিবীর অসংখ্য মানুষ লকডাউনে ছিল। এই ভাইরাসের প্রভাবে অনেক মানুষ একই সাথে শারীরিক ও মানসিক সমস্যার শিকার। দীর্ঘ দিন গৃহে বন্দী থাকার জন্য অনেকই আক্রান্ত হয়েছেন বিভিন্ন ধরনের মেটাবলিক অসুখে। যেমন ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেশার, ওবিসিটি সহ বহুবিধ সমস্যা। অনেকেই হারিয়েছেন চাকরি, অগণিত মানুষ এই ভাইরাসের জন্য অর্থনৈতিকভাবে ভীষণ বিপদের শিকার। ছাএ ছাএীদের লেখাপড়াতেও এসেছে অনেক পরিবর্তন। তারা দীর্ঘ দিন থেকে গৃহবন্দী। হাটাচলার অভাব, শারীরিক পরিশ্রম এর অভাবে তাদের অনেকের ওজন বেড়ে গেছে। বাড়ন্ত শিশুদের বৃদ্ধিতেও তৈরী হয়েছে বাধা। বর্তমানে আমাদের দেশে চলছে করােনা ভাইরাসের ২য় ঢেউ। আমাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শারীরিক পরিশ্রম করার। চেষ্টা করতে হবে। রাজধানী ঢাকার কথা যদি বলি, আমরা এই শহরে গৃহবন্দী হিসেবে দিন পার করি। ফ্লাট বাসার বেলকোনি গুলােও খুব ছােট। নেয় কোন খেলার মাঠ। শিশু থেকে ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত সবাই ইন্টারনেটে লেখাপড়া করছে। এই অবস্থা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কারণ ছােট বড় প্রায় সবারই শারীরিক পরিশ্রম কমে গেছে। চেষ্টা করতে হবে লিফট পরিহার করে সিড়ি বেয়ে ওঠানামা করার জন্য। বাসা, অফিস, শপিং মল সহ জরুরী কাজের জায়গাতেও যতােটা সম্ভব লিফট পরিহার করতে হবে। নিয়মিত লিফট ব্যবহার করতে করতে এক সময় মানুষ সিড়ি বেয়ে ওঠার অভ্যাস হারিয়ে ফেলে। যা মােটেও কাম্য। নয়। সিড়ি দিয়ে ওঠা স্বাস্থ্যের জন্য যথেষ্ট উপকারী। তবে অবশ্যই দশ বা বারাে তলা পর্যন্ত নয়। চার থেকে পাঁচ তলা পর্যন্ত সিড়ি বেয়ে ওঠা উত্তম। সিড়ি দিয়ে উঠা নামা করলে হৃৎপিন্ডে সঠিক ভাবে রক্ত চলাচল করে।

হৃৎপিন্ড দেহের ভীষণ জরুরী অঙ্গ। পুরাে দেহে রক্ত সরবরাহ করা হৃৎপিন্ডের কাজ। সিড়ি দিয়ে ওঠা নামা করলে বা নিয়মিত হাটলে, পুরাে দেহে অক্সিজেন সরবরাহের মাত্রা বেড়ে যায়। দেহের শিরা উপশিরার মধ্যে অক্সিজেনের মাত্রা | বেড়ে গেলে, সারা শরীরে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের সরবরাহ বেড়ে যায়। ফলে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত দেহের প্রতিটি
অঙ্গে পৌঁছে যায়। এতে দেহের রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা বাড়ে এবং হৃৎপিন্ডও ভালাে থাকে। | এবং মস্তিস্কেও রক্ত সরবরাহ হয়। মস্তিস্কে অক্সিজেন লেভেল এর মাত্রা বেড়ে যাবার জন্য মস্তিস্কের শিরা উপশিরাও সঠিকভাবে কাজ করে। যারা ওজন নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করছেন, তারা লিফটের পরিবর্তে সিড়ি ব্যবহার করার চেষ্টা করেন। তবে হৃদরােগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত সিড়ি দিয়ে বেশী ওপরে উঠবেননা। | কোন অপারেশনের পরে চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত, ওজন কমানাের আশা বা হৃৎপিন্ড ভালাে রাখার জন্য সিড়ি ব্যবহার করবেন না। গর্ভাবস্থায় শেষের দিকে বা যেসব গর্ভবতী মায়েদের রক্তপাত হয়, তারা সিড়ি পরিহার করাই ভালাে।। পেন্সিল হিল পড়ে আট বা দশ তলা সিড়ি দিয়ে ওঠা অনুচিৎ। আপনার জানা মতে হৃদরােগ না থাকলে, লিফট এর পরিবর্তে সিড়ি ব্যবহার করবেন। | দৈহিক পরিশ্রম করলে আমরা যখন ঘেমে যাই, তখন ঘামের মাধ্যমে আমাদের দেহ থেকে অনেক রােগ জীবাণু শরীর থেকে বের হয়ে যায়। সিড়ি দিয়ে ওঠা নামা করলে শ্বাস প্রশ্বাস জোরে জোরে হয়। তখন হৃদপিন্ডও ভালােভাবে কাজ করে। তাই লিফটের পরিবর্তে যতােটা সম্ভব সিড়ি ব্যবহার করবেন। শিশুদেরকেও সিড়ি বেয়ে ওঠানামার প্রশিক্ষন দিতে হবে। তারা বাসা, স্কুল, শপিং মল অধিকাংশ জায়গায় লিফট দিয়ে চলাচল করে। পরিণামে আক্রান্ত হচ্ছে ওবিসিটি ( ওজন বৃদ্ধির অসুখ) তে। বড়দের মতাে তাদেরও রােগ প্রতিরােধ শক্তি কমে যাচ্ছে। ছােটরাও এগিয়ে যাচ্ছে টাইপ টু ডায়াবেটিস এর দিকে। বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী অতিরিক্ত ওজন ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেশার এর দায়ী। রক্তে চর্বির মাত্রা কমানাের জন্যও লিফট দিয়ে চলাচল এর পরিবর্তে সিড়ি বেয়ে ওঠানামা ভীষণ জরুরী।
ফারহানা মােবিন।
চিকিৎসক, লেখক ও উপস্থাপিকা

বইমেলায় ডা. ফারহানা মোবিনের দুই বই

এইবারের অমর একুশে বই মেলায় লেখক ও চিকিৎসক ফারহানা মোবিনের লেখা শিশুতোষ গল্পের বই ‘গোলাপি রঙ পেন্সিল’ এবং সামাজিক সমস্যা ও তার প্রতিকার বিষয়ক বই ‘আমিও মানুষ’ প্রকাশিত হয়েছে।

লেখকের শিশুতোষ অন্য একটি গল্পের বই ‘উড়ে যায় মুনিয়া পাখি’ (২০১৪ সালে প্রকাশিত)। শিশুতোষ বই দুইটি পাওয়া যাবে ছোটদের বই প্রকাশনীর ৭৩৯ স্টলে। এছাড়া লেখকের ২০২০ সালে বিদ্যা প্রকাশনীর ব্যানারে ‘আমিও মানুষ’’ বইটি পাওয়া যাবে ২৬৬, ২৬৭, ২৬৮ ও ২৬৯ স্টলে।

শিশুতোষ বই দুইটির প্রচ্ছদ ও অলংকরণ করেছেন চিত্র শিল্পী বায়েজীদ সোহাগ। প্রকাশক সালমা রেহানা। বই মেলা শেষ হলে বইগুলো রকমারি ডট কমে পাওয়া যাবে। শিশু উন্নয়ন মূলক বই দুইটি সহজ-সরল ভাষায় লেখা হয়েছে।

ডা. ফারহানা মোবিন সাত বছর ঢাকার পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতালে স্ত্রী ও প্রসূতি বিভাগের মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পেশায় চিকিৎসক হলেও সামাজিক কাজ কর্ম ও লেখালেখি করেন নিয়মিত। তার লেখালেখি শুরু হয় চতুর্থ শ্রেণী থেকে তার লেখালেখির শুরু। শৈশব থেকেই শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির সাথে জড়িত তিনি।

ডা. ফারহানা মোবিনের স্বাস্থ্য বিষয়ক অন্য বইগুলো বিদ্যা প্রকাশনীর স্টালে পাওয়া যাবে। বই গুলো হলো- শরীর স্বাস্থ ও পুষ্টি (২০১২), সবার আগে স্বাস্থ্য (২০১৩) ও আসুন সুস্থ থাকি (২০১৮) ।

চর্বি কমায় পেঁপে

পেঁপে। প্রায় সব ঋতুতেই পেঁপে পাওয়া যায়।
কাঁচা ও পাকা উভয় পেঁপেই শরীরের জন্য উপকারী।
কাঁচা পেঁপেতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিওলাইটিক এনজাইম। উপাদানটি প্রোটিন হজমের জন্য সাহায্য করে। তাই প্রচুর পরিমাণে গরু, খাসি বা মুরগির মাংসের সঙ্গে কাঁচা পেঁপে বা রান্না করা পেঁপে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয়।
যাঁদের খুব বেশি অ্যাসিডিটি হয়, তাঁদের জন্য পেঁপে ভীষণ উপকারী।
পেঁপে পাকা ও কাঁচা দুইভাবেই খাওয়া যায়।
পেঁপের এনজাইমের জন্য মাংসের আমিষ ভালোভাবে রক্তের সঙ্গে মেশে এবং মাংসের চর্বির ক্ষতিকর দিকটা কমিয়ে দেয়।
এনজাইম খাবার হজমকারী রক্তের একধরনের উপাদান। মাংসে কাঁচা পেঁপে দিলে তা সেদ্ধ হয় দ্রুত।
কাঁচা পেঁপে, শসা, গাজর, লেটুস বা ধনেপাতার সালাদ ওজন কমাতে রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
পেঁপে যুদ্ধ করে দেহের বাড়তি মেদের বিরুদ্ধে।
কাঁচা পেঁপের প্রোটিওলাইটিক এনজাইম ক্যানসার নিরাময়ে রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আর এই উপকারের জন্য কাঁচা পেঁপে রান্নার পরিবর্তে কাঁচা খাওয়াটাই উত্তম।
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’র বসতি পাকা পেঁপেতে। ভিটামিন ‘এ’, ও ‘সি’ শরীরের রোগপ্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, যুদ্ধ করে ছোঁয়াচে রোগের বিরুদ্ধে; দাঁত, চুল, ত্বকের জন্য বয়ে আনে সুফল।
অ্যান্টি-এজিং ফ্যাক্টর, অর্থাৎ বৃদ্ধ বয়সকে দূরে ঠেলে দেওয়ার উপাদান রয়েছে পেঁপেতে।
তাই ত্বকের ওপরেও কাজ করে এই ফল। এতে কোনো খারাপ কোলেস্টেরল, চর্বি বা ফ্যাট নেই।
মোটা মানুষেরা দুশ্চিন্তামুক্ত হয়ে খেতে পারেন।
ডায়াবেটিসের রোগীরা মিষ্টি পেঁপে পরিহার করুন। অনেকেই পেঁপের আচার খেতে পছন্দ করেন। এই ফল আচারের পরিবর্তে কাঁচা খাওয়াটা বেশি উপকারী।
হজমের আশায় খুব বেশি না খেয়ে পরিমিত খাওয়ায় উত্তম।
ছোটদেরকেও পেঁপে খাওয়ার জন্য উৎসাহিত করা দরকার।
পেঁপে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। তাই ডায়রিয়া চলাকালে পেঁপে না খাওয়াই ভালো।

মেলায় এসেছে ডা. ফারহানা মোবিনের ‘সুস্থ থাকতে চাই

ফারহানা মোবিন পেশায় চিকিৎসক হলেও লেখালেখি করেন শৈশব থেকেই। এবারের অমর একুশে বইমেলায় এসেছে ফারহানা মোবিন এর লেখা স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ক বই “সুস্থ থাকতে চাই “। কিভাবে কিছু স্বাস্থ্য সচেতনতা অবলম্বন করে আমরা নিজেকে সুস্থ রাখতে পারবো, আমাদের চারপাশের সারা বছরের পরিচিত কিছু অসুখ নিয়ে সচেতনতাবোধ এই বই এর মূল বিষয়বস্তু। বইটি প্রকাশিত হয়েছে বিদ্যা প্রকাশনা থেকে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বাংলা একাডেমি তে স্টল নং – ৩২৭,৩২৮,৩২৯,৩৩০।

ফারহানা মোবিন লেখালেখি শুরু করেন চতুর্থ শ্রেণি থেকে। তিনি শৈশব থেকেই শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির সাথে জড়িত। নারী ও শিশু উন্নয়ন, সামাজিক সমস্যা, স্বাস্থ্য সচেতনতা, জীবনযাপন, সাহিত্য বিষয়ক লেখেন নিয়মিত দেশ বিদেশের অগণিত সংবাদপত্র, ম্যাগাজিনে তাঁর লেখা স্বাস্থ্য বিষয়ক অন্য বই গুলোও পাওয়া যাবে বিদ্যা প্রকাশনীতে।

বই গুলো হলো –

১) শরীর স্বাস্থ ও পুষ্টি,
২) সবার আগে স্বাস্থ্য,
৩) আসুন সুস্থ থাকি,

২০২০ সালে বিদ্যা প্রকাশনা থেকে সামাজিক সমস্যা ও তার প্রতিকার বিষয়ক বই
আমিও ” মানুষ ” প্রকাশিত হয়েছে।

তাঁর লেখা ছোটদের বই গুলো সব বয়সের পাঠকের পড়ার উপযোগী। শিশুতোষ তিনটি বই প্রকাশিত হয়েছে ছোটদের বই প্রকাশনা থেকে।

শিশুতোষ বইগুলো হলো –

১) উড়ে যায় মুনিয়া পাখি,
২) গোলাপি রং পেন্সিল,
৩) ভালো ছেলে।

বই মেলা শেষ হলেও সব বই সংগ্রহ করা যাবে রকমারি ডট কম থেকে । তিনি ছোট বড়ো সব বয়সের পাঠকের জন্য খুব সহজ ভাষায় লেখেন। ফারহানা মোবিনের জন্ম, বেড়ে ওঠা রাজশাহী বিভাগে। এমবিবিএস এর পরে তিনি এমএস করেন পাবলিক হেলথ এ। বারডেম হাসপাতাল থেকে ডায়াবেটিস এবং হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল থেকে হৃদ রোগের উপর সার্টিফিকেট কোর্স সম্পন্ন করেন। তিনি বর্তমানে জেনারেল ফিজিশিয়ান হিসেবে কাজ করছেন।

মেডিকেল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন নগরীর গ্রীন লাইফ মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল এবং স্কয়ার হসপিটালে। অসহায় মানুষের ফ্রী চিকিৎসা, সমাজ সচেতনতামূলক লেখা, টিভি চ্যানেলে অনুষ্ঠান এবং বহুবিধ সামাজিক কাজের জন্য তিনি অর্জন করেন, ” বিজেম সম্মাননা এওয়ার্ড ২০১৯”, ” উইবিডি সম্মাননা এওয়ার্ড ২০১৮ “, ” স্বাধীনতা সংসদ আলোকিত নারী সম্মাননা এওয়ার্ড ২০১৯ “।

বিষণ্নতা নীরব ঘাতক

মানুষের চাহিদার শেষ নেই। আশা আকাঙ্ক্ষার সাথে যখন প্রাপ্তির মেলবন্ধন থাকে নাতখনই মানুষের মন খারাপ হয়। যারা বাস্তববাদী মানুষ তারা সবকিছু খুব দ্রুত মেনে নিতে পারেন। কিন্তু যারা নৈরাশ্যবাদীঅধিকাংশ সময়ে নেতিবাচক চিন্তা যে মানুষগুলোর মস্তিষ্কে বাসা বেঁধে থাকেসেই মানুষগুলো সহজে দুঃখ-কষ্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারে না। খুব দ্রুত হতাশার সাগরে ডুবে যায়। জীবনে বিপর্যয় আসবেই। আমাদেরকে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। কিন্তু যারা মেনে নিতে পারেন নাভেঙ্গে যাওয়া মনকে শক্ত করতে পারেন নাতারাই ভুগতে থাকেন বিষণ্নতায়।

বিষণ্নতা কখন যে মানুষকে গ্রাস করে মানুষ নিজেও বুঝতে পারে না। দিনের পর দিন মন খারাপদুঃখ-কষ্টনেতিবাচক চিন্তা থেকে তৈরি হয় বিষণ্নতা। বিষণ্নতা বা ডিপ্রেশন দীর্ঘ সময় যাবৎ থাকলেসেটা হয়ে ওঠে মানসিক রোগ।

বিষণ্নতার লক্ষণ—

(১)        মন খারাপ থাকা- সব মানুষেরই রয়েছে না পাওয়া। কারো হয়তো কম। কারো বেশি। মানুষকে বাহির থেকে দেখে উপলব্ধি করা যায় নাকিন্তু কোনো মানুষই পরিপূর্ণ সুখী নয়। মানুষকে চারপাশের পরিবেশ মানিয়ে নিয়ে চলতে হয়। বিষণ্নতার রোগীরা প্রায় সবসময়ই খুব বেশি মন খারাপ করে থাকে। মন খারাপ করার জন্য তারা জরুরি কাজেও দিতে পারেন না মনোযোগ। অতিরিক্ত মন খারাপ থেকে বেড়ে যায় আত্মহত্যা করার প্রবণতা।

(২)        নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া- বিষণ্ন রোগী জনকোলাহলমানুষজন থেকে একাকী নিভৃতে থাকতে পছন্দ করেন। তাদের মধ্যে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার প্রবণতা কাজ করে। মানুষজনআনন্দ আয়োজন তাদের ভালো লাগে না। মানুষজনের মাঝে থাকলেও একাকীত্ববোধ প্রতি মুহূর্তে তাদেরকে গ্রাস করে।

(৩)        হীনমন্যতাবোধ- নিজে অধিকাংশ সময় অন্যের তুলনায় পেছনে পড়ে আছেজীবন থেকে অনেক পিছিয়ে গেছেএই ধরনের অনুভূতি তাদের মস্তিষ্কে বাসা বেঁধে ফেলে। বছরের পর বছর এই ধরনের হীনমন্যতাবোধ চলতেই থাকে। এই ধরনের সমস্যা থেকে আনন্দের মাঝেও তাদের কান্না পায়। একটু কষ্টে কান্নায় ভেঙ্গে পড়তেও দেখা যায়।

(৪)        ওজনের পরিবর্তন- হঠাৎ ওজন বেড়ে বা কমে যাওয়াক্ষুধার হঠাৎ করে তারতম্য তৈরি হওয়ানিদ্রাহীনতা বা ঘুমের পরিমাণ বেড়ে যাওয়াএই ধরনের সমস্যা অনেকের মাঝে দেখা যায়। খুব বেশি মন খারাপের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ত্বকচুলসহ পুরো দেহের উপর। অনেক সময় দেখা যায় খাবার হজমে সমস্যা হচ্ছে। মাথা ব্যথা লেগেই থাকছে।

(৫)        শ্বাসকষ্ট- বিষণ্নতা মস্তিষ্কে অক্সিজেনের মাত্রা কমিয়ে দেয়। দিনের পর দিন এই অবস্থা চলতে থাকলেঅনেক সময় ভয়ানক শ্বাসকষ্টও হতে পারে। কোনো বেদনাবিধুর ঘটনার আঘাতজনিত স্মৃতিপ্রিয় কাউকে হারিয়ে ফেলার কষ্ট বা কোনো কষ্টের ঘটনাযা কাউকে বলা যায় নাবহনও করা যায় নাএই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটতে থাকলে বিষণ্নতার রোগীদের অনেক সময় বুকে ব্যথাবুক ধড়ফড় করা বা শ্বাসকষ্ট হয়। হয়তো ইসিজি বা হৃৎপিণ্ডের পরীক্ষা করালে তেমন কিছুই ধরা পড়ে না কিন্তু মস্তিষ্কে ও রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা প্রতিয়নিত কমে যাওয়ার জন্য শরীর খারাপ লাগেনিঃশ্বাস নিতে অনেকের কষ্ট হয়।

(৬)        জ্বর জ্বর অনুভূতি- সারা দেহে ব্যথামাথা-ঘাড়ে ব্যথাদেহের প্রতিটি জয়েন্টে ব্যথাজ্বর জ্বর অনুভূতিমাথা ঘোরানোমেজাজ খারাপ লাগাএকটুতেই রেগে যাওয়াঅতিরিক্ত শুচি বায়ুগ্রস্থতাএই ধরনের সমস্যাগুলো থাকতে পারে।

(৭)        উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস- অধিকাংশ বিষণ্নতার রোগী অকালেই ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়। বছরের পর বছর দুঃখ কষ্ট লুকিয়ে রাখতে রাখতে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরিণামে কমে যায় যায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।

(৮)        ত্বকের সমস্যা- দুশ্চিন্তামানসিক অবসাদের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে আমাদের ত্বকচুলের উপর। বিষণ্নতার রোগীদের চুল ঝরে যাওয়ারত্বকে মেসতাচোখের নিচে কালি জমে যায়। অনেকের হরমোন লেভেলের তারতম্য ঘটে।

(৯)        মাইগ্রেনের সমস্যা- মাথা ব্যথামানসিক চাপ থেকে মাইগ্রেনের সমস্যা বেড়ে যায়। অনেকেই মাথা ব্যথা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য প্রচুর পরিমাণে চাকফিসিগারেট খায়। অতিরিক্ত চাকফিসিগারেট স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

(১০)      মানসিক রোগ- বিষণ্নতা বছরের পর বছর থাকলে বিভিন্ন ধরনের মানসিক রোগ হতে পারে। অধিকাংশ মানসিক রোগ তৈরি হয় বিষণ্নতাহতাশা থেকে।

বিষণ্নতার কারণ ও করণীয়—

(১)        দীর্ঘমেয়াদি কোনো দুঃখকষ্টহতাশা থেকে তৈরি হয় বিষণ্নতা। যা অধিকাংশ সময়ে ধরা পরে না। হয়তো বড় ধরনের জটিলতা তৈরি হলে তখন বিষণ্নতার রোগীদের রোগ নির্ণয় হয়। বিষণ্নতার উল্লেখিত লক্ষণগুলো কারো মধ্যে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ ভীষণ জরুরি।

(২)        সবসময় ইতিবাচক চিন্তাধর্ম-কর্মসৃজনশীল কাজে ব্যস্ত থাকলে হতাশা মানুষকে সহজে গ্রাস করতে পারে না।

(৩)        ব্যর্থতা জীবনে থাকবেই। এর মাঝেও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। নৈরাশ্যবাদী বন্ধু-বান্ধবীদের বা প্রতিবেশীর কথাতে নিজেকে অযোগ্য ভেবে কষ্ট পাওয়ার পরিবর্তে আমরা কীভাবে সামনে এগিয়ে যাবকীভাবে নিজেকে যোগ্য হিসেবে প্রমাণ করবআমাদেরকে সেই চেষ্টা করতে হবে।

(৪)        নিজেকে বাস্তববাদী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নিয়মিত খবরের কাগজ পড়াসময় উপযোগী টক শো দেখাইতিবাচক নাটক সিনেমাইউটিউবে আত্ম উন্নয়নমূলক ভিডিও আপনাকে দেবে মানসিক প্রশান্তি। জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য বাস্তববাদী চিন্তা-চেতনাচারপাশের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর সম্পর্কে ধারণা রাখাটা অপরিহার্য।

(৫)        সময়-সুযোগ পেলেই চোখ বন্ধ করেকয়েক মিনিট বুক ভরে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করবেন। মস্তিষ্কে যত বেশি অক্সিজেন পৌঁছেআমাদের পুরো দেহের রক্তে ধীরে ধীরে সেই অক্সিজেন পৌঁছে। এতে কমবে মাথার মধ্যে জ্যাম হওয়ার অনুভূতি অর্থাৎ স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা। যা বিষণ্নতা তৈরির জন্য একটি নিয়ামক হিসেবে কাজ করে।

(৬)        সময় ও সুযোগ পেলেই বেড়াতে যেতে হবে। মানুষের সাথে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। বহু মানুষের সাথে যোগাযোগ থাকলেমানুষের মন উপলব্ধি করতে পারে যেসে একাই দুঃখী নয়। এই পৃথিবীতে একেক মানুষের রয়েছে একেক ধরনের সমস্যা। এই সমস্যা থেকে আমাদের নিজেদেরকে দূরে থাকতে হবে। আমাদের মনোবল হারালে চলবে না।

(৭)        আপনি নিজ থেকে কিছুতেই যদি আপনার মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেনতাহলে দ্রুত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিৎ।

(৮)        অনিয়ন্ত্রিত আবেগরাগআতঙ্ক থেকেও মানসিক রোগবিষণ্নতা তৈরি হয়। দিনের পর দিন এই ধরনের অস্বাভাবিক আচরণ নিজের বা পরিবারের কারো মধ্যে থাকলে সাইকোথেরাপিস্ট এর পরামর্শ জরুরি।

(৯)        সময় পেলেই হাঁটতে হবে। হাঁটাহাঁটি করলে মানুষের সারা দেহে সুষ্ঠুভাবে রক্ত চলাচল করে। এতে মানুষের মন ভালো থাকে।

(১০)      কুটিলজটিলঅশান্তি বাধাতে পছন্দ করেএই ধরনের মানুষ থেকে দূরে থাকাটাই শ্রেয়।

চাই ভবিষ্যৎ সঞ্চয়

বর্তমান যুগ তীব্র প্রতিযোগিতার। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভীষণ প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য চাই কৌশল, পরিশ্রম আর অর্থ। জীবনে টাকার যথষ্টে প্রয়োজন। যারা লেখাপড়া করছ, তাদেরকে আজকাল পড়ালেখার পাশাপাশি আরও অনেক কিছু শিখতে হয়। যেমন: গান, নাচ, ছবি আঁকা, কবিতা আবৃত্তি, অভিনয়, কারাতে ইত্যাদি। আর এই বাড়তি কাজগুলো শিখতে প্রয়োজন বাড়তি টাকার। আমাদের যোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য আমাদের অভিভাবকদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। এখনকার বাবা–মাকে পরিশ্রম করতে হয় আরও অনেক বেশি। খেয়াল করে দেখো, যত দিন যাচ্ছে, জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলেছে।
এই বেড়ে চলা দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের অনেক কিছু করতে হচ্ছে, অনেক কিছু শিখতে হচ্ছে।
ছাত্রছাত্রীদের খেয়াল রাখতে হবে, বাবা–মায়ের ওপরে যেন খুব বেশি চাপ পড়ে না যায়।
পৃথিবীটা যত উন্নত হতে থাকবে, বিভিন্ন রকম প্রয়োজন বাড়তেই থাকবে।
তাই ছাত্রছাত্রীদের দায়িত্বশীল হতে হবে। নিজের শখ মেটানোর জন্য বাবা–মাকে অতিরিক্ত চাপ দেওয়াটা অনুচিত। অনেকেই দামি পোশাক, দামি প্রসাধন ব্যবহার করতে খুব পছন্দ করে। নামীদামি রেস্টুরেন্টে নিয়মিত ফাস্ট ফুড খায়। এই ধরনের ভালোলাগা যাদের মধ্যে কাজ করে, তাদেরকে চেষ্টা করতে হবে নিজের শখ মেটানোর জন্য বাবা–মাকে অতিরিক্ত চাপ যেন দেওয়া না হয়।
ফাস্ট ফুডের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। দামি পোশাক মানুষের শখ মেটায়, মানুষকে আধুনিক বানায়। কিন্তু যোগ্যতা আর শিক্ষা না থাকলে শুধু দামি পোশাক কিন্তু মূল্যহীন।
তাই ছাত্রছাত্রীদের অবশ্যই মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করতে হবে। নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। সামনে রোজার ঈদ। করোনাভাইরাসের জন্য সারা পৃথিবীতে বিশাল বড় একটা পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের দেশেরও বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। শপিং মলগুলো অনেক এলাকায় খুলে দেওয়া হয়েছে। চেষ্টা করতে হবে সামনের ঈদের জন্য আমরা যেন আমাদের অভিভাবকদের চাপ না দিই। আমাদেরকে পরিস্থিতি বুঝতে হবে। আমরা আশাবাদী, লকডাউন অল্প অল্প করে তুলে নেওয়া হবে। পৃথিবীটা আবার আগের মতো হয়ে যাবে।
ছাত্রছাত্রীরা অতিরিক্ত শখের জিনিসগুলো না কিনে সেই টাকা জমিয়ে রাখা উচিত ভবিষ্যতের জন্য। বাজারে বা ফুটপাতে বা বড় বড় শপিং মলে পাওয়া যায় টাকা ও পয়সা জমিয়ে রাখার জন্য মাটি বা কাঠের তৈরি সুদৃশ্য বিভিন্ন ধরনের ব্যাংক বা পট।
যদি ব্যাংকে যাওয়ার সময় না থাকে, তাহলে মাটির ব্যাংকে টাকা বা পাঁচ টাকার কয়েন বা যতটুকু পারা যায় সঞ্চয় করার চেষ্টা করা যায়। নিজেদের পড়ার টেবিলেও সাজিয়ে রাখা যায় মাটির ব্যাংকগুলো। আজকাল শোপিসের মতো এসব পাত্র কিনতে পাওয়া যায়। এসব ব্যাংক পড়ার টেবিল ছাড়া ডাইনিং টেবিল, ড্রয়িংরুম বা ঘরের শোকেসেও সাজিয়ে রাখা যায়। আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করা। একটু একটু করেই চেষ্টা করতে হবে। তাহলে বছর শেষে কিছু টাকা জমে যাবে। এক টাকা থেকেই শুরু করা যায়। বিন্দু বিন্দুতে সিন্ধু হয়ে যায়। প্রতিদিন তো আর ব্যাংকে টাকা বা পয়সা জমানো সম্ভব নয়।
যখন সম্ভব হবে, তখন টাকা জমানো যাবে। মনে রাখতে হবে যে শখ করে টাকা জমাচ্ছ।
তাই টাকা জমানোর জন্য মা–বাবা, ভাইবোন বা পরিবারের অন্য কাউকে চাপ দেওয়াটা অনুচিত।
বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে আমাদের খরচের টাকা থেকে বাঁচিয়ে জমাতে হবে। দেখবে ৬ মাস বা ১ বছর পরে হয়ে যাবে মোটা অঙ্কের টাকা, যা দিয়ে পূরণ হবে নিজের কোনো ইচ্ছা। নিজের জমানো টাকার সঙ্গে পরিবারের অন্য সদস্যদের কিছু টাকা যুক্ত করে হয়ে যাবে ট্যাব বা ল্যাপটপ অথবা নিজের পছন্দের কিছু। তোমার বন্ধুদেরও বলতে খুব ভালো লাগবে যে নিজের জমানো টাকা দিয়ে কিনেছ নিজের প্রিয় কিছু। আর তোমার অভিভাবকেরাও হয়তো একটি দায়িত্ব থেকে মুক্তি পাবেন। তাঁরাও ভীষণ খুশি হবেন। কারণ, সঞ্চয় করাটা প্রত্যেক মানুষেরই উচিত। আর এই অভ্যাস টিকিয়ে রাখতে পারলে একদিন সঞ্চয়ের পরিমাণ অনেক বাড়বে।
কারণ, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকণাতেই বিশাল মহাদেশ গড়ে ওঠে। তাই বন্ধুরা, এখন থেকেই সংযমী হওয়ার চেষ্টা করো। অপচয় না করে ভবিষ্যতের জন্য গড়ে তোলো সঞ্চয়ের ভুবন।

চাই ইতিবাচক চিন্তা

দুঃখ ছাড়া কোনো জীবন হয়না। প্রতিটি মানুষের জীবনেই কিছু অপূর্ণতা থাকে। অধিকাংশ মানুষকে বাইরে থেকে হাসি-খুশি মনে হলেও সবাই শতভাগ সুখি কেউ নয়। একেকজন মানুষের রয়েছে একেক রকম না পাওয়া। আমাদের চেষ্টা করতে হবে, এই না পাওয়াগুলোকে ভুলে, আমরা কিভাবে সামনে এগিয়ে যেতে পারবো সেই চেষ্টা করতে হবে। মন ভালো রাখার জন্য সব সময় ইতবাচক চিন্তা করতে হবে। আমাদের মন যতো বেশি ভালো থাকবে, আমরা মানসিকভাবে হব ততোটাই শক্তিশালী। মানসিক শক্তি বাড়ানোর জন্য আমাদের প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকা ভীষণ জরুরি।

ধর্ম, কর্ম, ইয়োগা, ধ্যান, মেডিটেশন, সৃজনশীল কাজ, নিজেকে জনকল্যাণমূলক কাজে নিয়োজিত রাখতে পারলে আমরা ভালো থাকবো। এই ধরণের কাজগুলো বাড়িয়ে তোলে আমাদের মানসিক শক্তি। চেষ্টা করতে হবে জীবিকার পাশাপাশি সৃজনশীল কাজ বা আত্মউন্নয়নমূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখার জন্য। তাহলে নেতিবাচক চিন্তা, হতাশা, দুঃখ, কষ্ট সহজে মনকে দুর্বল করতে পারবে না। আপনি যে ধর্মেরই হোন না কেন; নিয়মিত ধর্মকর্ম, মেডিটেশন, ধ্যান আপনাকে দিবে মানসিক প্রশান্তি। প্রতিটি ধর্মের প্রার্থনায় ধ্যান বিষয়টা কিছুটা হলেও চলে আসে। তাই নিয়মিত ধর্মকর্ম করলে মস্তিষ্কের বিশ্রাম হয়। মস্তিষ্কের বিশ্রাম হলে মানুষের মস্তিষ্ক দ্বিগুণ কর্মক্ষম হয়ে ওঠে। আমাদের মাথার মধ্যে রয়েছে অগণিত শিরা-উপশিরা ও স্নায়ু। আমরা যখন ঘুমিয়ে থাকি তখনও এই শিরা, উপশিরা ও স্নায়ু কাজ করতে থাকে। তবে জেগে থাকা অবস্থায় মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলো কাজ করে তুলনামূলকভাবে বেশি।

কর্মতৎপর স্নায়ু

মাতৃগর্ভে থাকাকালীন একটি শিশুর মস্তিষ্ক তৈরি হতে থাকে। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত চলতে থাকে মস্তিষ্কের বিরামহীন যাত্রা। আমরা যখন প্রার্থনা, ধ্যান বা মেডিটেশান করি তখন আমাদের মস্তিষ্কের শিরা-উপশিরা ও স্নায়ুগুলোর বিশ্রাম হয়। অনেক কাজ করার পরে মানুষের যেমন বিশ্রাম প্রয়োজন, ঠিক তেমনই আমাদের মস্তিষ্কেরও বিশ্রাম প্রয়োজন। আমাদের মস্তিষ্কে রয়েছে মাকড়শার জালের মতো অসংখ্য স্নায়ু। এই স্নায়ুগুলো মাথা থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত বিস্তৃত। স্নায়ুগুলো যতো বেশি কর্মতৎপর হবে, আমরা ততো বেশি কর্মক্ষম হয়ে উঠবো। সেজন্য ইতিবাচক চিন্তা, ধর্মকর্ম, ভালোলাগার কাজগুলো ভীষণ জরুরি। আমাদের রক্তে হরমোন নামে ভীষণ জরুরি এক উপাদান রয়েছে। হরমোনগুলো সংখ্যায় একাধিক এবং প্রতিটি হরমোন দেহের জন্য পালন করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সৃজনশীল কাজ, ধর্মকর্ম, ইয়োগা, মেডিটেশন আমাদের রক্তে সেরোটোনিন নামের এক ধরণের হরমোন লেভেলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এই হরমোনের মাত্রা রক্তে বৃদ্ধি পেলে, মানুষ কাজে উৎসাহ পায়। মানুষের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়।

ঘুরে দাঁড়ান

জীবনে ব্যর্থতা থাকবেই। আমাদের চেষ্টা করতে হবে, বারবার ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য। জীবনের ধ্বংসস্তুপের মাঝেও ইতিবাচক চিন্তা আমাদের দেবে মানসিক শক্তি। জোর করে মন ভালো করার চেষ্টা করতে হবে। যতো বেশি হতাশা বা বিষণ্নতা আমাদের গ্রাস করবে, আমরা ততোটাই এগিয়ে যাবো ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপের দিকে। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশসহ বর্তমানে বাংলাদেশেও অসংখ্য তরুণ তরুণী ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত। এর অন্যতম প্রধান কারণ দুঃখ, কষ্ট, অতিরিক্ত মানসিক চাপ, হতাশা, বিষণ্নতা। বছরের পর বছর হতাশায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে আমাদের সমাজে অনেকেই মানসিক রেগের শিকার হয়। যা অনেক সময় ধরা পড়েনা। মানসিক রোগ অনেক সময় চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে ধরা পড়ে। এই ধরণের পরিণতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য আমাদের নিজেকে ভালোবাসতে হবে। নিজেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখার জন্য সব সময় ইতিবাচক চিন্তা করতে হবে।

 

সৃজনশীল কাজ

আপনার সৃজনশীল কোনো কাজের প্রতি ভালোবাসা থাকলে সেই কাজগুলো করার চেষ্টা করবেন। ইউটিউবে বিভিন্ন ধরণের আত্মউন্নয়নমূলক ভিডিও আছে। এই ধরণের ভিডিওগুলো বাড়িয়ে তুলবে আমাদের মানসিক শক্তি। বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তি বিভিন্ন সময়ে বক্তৃতা দিয়েছেন বা তাদের সাক্ষাৎকারগুলো দেখলেই আমরা উপলব্ধি করতে পারবো যে, তারা কতোটা দুঃখ, কষ্টকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে গেছেন। পৃথিবীর অসংখ্য মনীষী সীমাহীন যুদ্ধ করে, অনেকেই চরম অভাব ও দারিদ্র্য জয় করে সফল হয়েছেন। ইতিহাসের পাতায় লিখিয়েছেন তাদের নাম। তাদের জীবনী পর্যালোচনা করলেই দেখা যাবে, তারা প্রায় সবাই ছিলেন ইতিবাচক চিন্তার মানুষ। ইতিবাচক চিন্তা মানুষের আত্মবিশ্বাসকে বাড়িয়ে তোলে কয়েক গুণ। আমরা চোখের পানি লুকিয়ে ইতিবাচক চিন্তা করবো। জীবনযুদ্ধে আমাদের সফল হতেই হবে।

 

একজন মহীরুহ রণদা প্রসাদ সাহা- ফারহানা মােবিন।

একজন সাধারণ
মানুষই হয়ে ওঠেন | মনীষী বা মহিরুহ।।
হয়ে ওঠেন ইতিহাসের স্বর্ণালি অধ্যায়, যখন তাঁর কর্মজগৎ মানুষকে | আলােড়িত করে, | তাঁর পরিশ্রমী জীবন হয়ে ওঠে মহৎ উদাহরণ। এমনই একজন হলেন রণদা প্রসাদ সাহা। যাঁর জীবনসংগ্রাম | বটবৃক্ষের মতাে দৃঢ়
আর সফলতা আকাশের মতাে ব্যাপক ও বিস্তৃত। রণদা প্রসাদ সাহা, যাঁর অপর নাম হলাে আরপি সাহা। যিনি জন্ম গ্রহণ করেন ঢাকার সাভারে ১৮৯৬ সালের ১৫ নভেম্বর। তাঁর বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ কুমার সাহা এবং মা হলেন কুমুদিনী সাহা। মাত্র সাত বছর বয়সে তিনি তাঁর মাকে হারান। | তাঁর মা সন্তান জন্ম দানের সময় টিটেনাস নামক একধরনের ইনফেকশনজনিত রােগে মারা যান। দরিদ্রতা ও চিকিৎসার অভাবে পরপারে চলে যান তাঁর মা। মাত্র সাত বছরের শিশুর মনে এই বিষয়টি গভীরভাবে প্রভাব ফেলে। তিনি সিদ্ধান্ত নেন, তিনি বড় হয়ে এমন কিছু করবেন, যেন কোনাে মা এভাবে সন্তান জন্ম দানের সময় চিকিৎসার অভাবে মারা না যান। | তাঁর এই স্বপ্নই পরবর্তী কালে নেয় সত্যের রূপ তাঁর চারপাশ ঘিরে ছিল দারিদ্র্যের অক্টোপাস। অর্থাভাবে তিনি মাত্র ১৬ বছর বয়সে নতুন জীবনের সন্ধানে কলকাতায় গমন করেন। তিনি তৃতীয় শ্রেণির বেশি পড়তে পারেননি। অর্থাভাবে তিনি ১৬ বছর বয়সে কলকাতায় গিয়ে কুলিগিরি থেকে শুরু করে সব রকম কাজ করেন।
জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়া এবং মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়ােজিত করার জন্য তিনি দিন-রাত পরিশ্রম করতে থাকেন। সমাজের সব শ্রেণির মানুষ বিশেষত দরিদ্র, অসহায়, বঞ্চিত ও অবহেলিত নারী সমাজের উন্নতির জন্য তিনি নিজের জীবন, ধনসম্পদ সব অকাতরে বিলিয়ে দেন। অক্লান্ত, অমানবিক পরিশ্রম করে তিনি সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে পৌঁছে যান। তাঁর জীবন বিচিত্রতায় ভরপুর। একসময় স্বদেশি আন্দোলনে অংশ নেন। প্রথম মহাযুদ্ধেও তিনি অংশ নেন। প্রথমে আর্মি অ্যাম্বুলেন্স এবং পরে যুক্ত হন ৪৯ নম্বর বাঙালি পল্টনে। শ্রম, মেধা আর বীরত্ব দিয়ে তিনি অর্জন করেন ‘সাের্ড অব অনার। সম্রাট পঞ্চম জর্জ তাঁকে বিলেতে (বর্তমান লন্ডন) আমন্ত্রণ জানান। রেলস্টেশনে কিছুদিন চাকরি করেন। চাকরি করার পরে কয়লা এবং নৌপরিবহনের ব্যবসা শুরু করেন। এভাবে বাঙালিদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত বেঙ্গল রিভার সার্ভিসের যাত্রা তাঁর মাধ্যমে। | তিনি পড়ালেখা করার সুযােগ পাননি। কিন্তু পরিশ্রম ও মেধা দিয়ে ব্যবসা করে তিনি উপার্জন করেন অনেক অর্থসম্পদ।
| তিনি লবণ, কয়লা, জাহাজ, চামড়া, খাদ্যদ্রব্য, পাওয়ার হাউসের ব্যবসা করেন। তাঁর ব্যবসা ক্ষেত্রের মাধ্যমে তিনি অনেক দরিদ্র পরিবারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন। একই সঙ্গে নারী শিক্ষা, দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থান, সমাজ থেকে কুসংস্কার দূর করার জন্য তিনি সামাজিক, সাংস্কৃতিক আন্দোলনে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ ভ,মিকা। অসহায় অসংখ্য পরিবারকে তিনি অর্থ দিয়ে সাহায্য করেন। সমাজ থেকে ধর্মীয় ও অন্ধকারাচ্ছন্ন কুসংস্কারগুলাে দূর করার জন্য তিনি গড়ে তােলেন সামাজিক আন্দোলন। দরিদ্র মানুষকে দান করার জন্য তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন দানবীর নামে। বিভিন্ন স্থানে স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠায় তিনি সাহায্য করতে থাকেন। ত্রিশের দশকের দিকে দেখা দেয় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। | হাজার হাজার মানুষ মরতে থাকে। তিনি নিজের অর্জিত অর্থে দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে তােলেন প্রায় ৩০০ লঙ্গরখানা। টানা আট মাস এই লঙ্গরখানার মাধ্যমে তিনি দেশের অসহায়, অনাহারী মানুষগুলােকে খাবার দিয়েছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে তুলেছেন দাতব্য চিকিৎসালয়। তাঁর নিজের এলাকায় নিজ অর্থে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন কুমুদিনী হাসপাতাল। | এই হাসপাতালটিই বর্তমানে রূপ নিয়েছে বিশাল এক প্রতিষ্ঠানে।। | একই সঙ্গে এটি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ। এখানে দুস্থ মানুষের চিকিৎসা হয়।
তিনি ছিলেন নারী শিক্ষার একজন অগ্রগামী দূত। | অবহেলিত নারী সমাজের জন্য তিনি গড়ে তুলেছিলেন ভারতেশ্বরী হােমস। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি। তিনি টাঙ্গাইলে প্রতিষ্ঠা করেন কুমুদিনী মহিলা কলেজ। | মানিকগঞ্জে গড়ে তােলেন দেবেন্দ্র কলেজ। রণদা প্রসাদ সাহা তাঁর বিভিন্ন ধরনের জনহিতৈষীমূলক কাজের জন্য গঠন করেন কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট। নারী জাগরণ, সমাজ থেকে কুসংস্কার দূর করার জন্য তিনি কাজ করে গেছেন নিরলসভাবে। | তাঁর সময়ে নারীরা ছিল অনেক অবহেলিত ও বঞ্চিত। তিনি সেই বঞ্চিত নারী সমাজের জাগরণ, সমাজ থেকে কুসংস্কার দূর করা এবং সমাজের অসহায় মানুষগুলােকে সাহায্য-সহযােগিতা করার জন্য ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। আমৃত্যু তিনি সমাজের উন্নতির জন্য কাজ করে গেছেন। তিনি ছিলেন সফল ব্যবসায়ী। শিল্পসাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি ছিল তাঁর প্রবল আকর্ষণ। তিনি বিশ্বাস করতেন যে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে সমাজকে পরিবর্তন করা সম্ভব।
এই বােধ থেকে ১৯৫৫ সালে মির্জাপুর আনন্দ নিকেতন নাট্যমঞ্চ প্রতিষ্ঠিত হয় তাঁর হাতে। | ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানের সময় পাকিস্তানের আইয়ুব সরকার তাঁর এই ভালাে কাজগুলােকে সম্মানে ভূষিত করেন। তিনি রণদা প্রসাদ সাহাকে ‘হেলালে পাকিস্তান’ নামে খেতাব দেন। কিন্তু তিনি এই খেতাব গ্রহণ করেননি। পাকিস্তান সরকারের খেতাব প্রত্যাখ্যান করার জন্য পাকিস্তান সরকার তাঁর প্রতি ভীষণ বিরক্ত হন। পাকিস্তানিরা বাঙালিদের অনেক অত্যাচার করেছে। এই অন্যায়-অবিচার কোনােভাবেই মেনে নেওয়ার নয়। তাই তিনি এত মূল্যবান খেতাব পেয়েও তা গ্রহণ করেননি। | খেতাব প্রত্যাখ্যান করার জন্য পাকিস্তান সরকার তাঁর কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ধ্বংস করার অনেক অপচেষ্টা
চালান। | তাঁর বিত্ত বৈভব, ক্ষমতা ও মানুষের প্রতি দায়িত্ববােধ ভালােবাসার জন্য ব্রিটিশ সরকার তাঁকে “রায়বাহাদুর’ উপাধি | দেন। তিনি তাঁর সব অর্জিত অর্থ মানুষের কল্যাণে ব্যয় করে গেছেন। ১৯৭১ সালে ৭ মে দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা ও তাঁর ২৭ বছর বয়সী ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহাকে পাকিস্তানি বাহিনীর | লােকেরা ধরে নিয়ে যায়। | দীর্ঘ বছর পর্যন্ত সবাই বিশ্বাস করত যে তাঁরা ফিরে আসবেন। কিন্তু তাঁরা আর ফিরে আসেননি। | তাদের লাশটাও আর পাওয়া যায় নি।

” ইনসুলিন হরমােন এর কাজ “

ডায়াবেটিস রােগে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। যখন খাবার নিয়ন্ত্রণ বা ওষুধ এর মাধ্যমে এই মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে আনা যায় না তখন ইনজেকশনের মাধ্যমে ইনসুলিন দিতে হয়। ইনসুলিন একটি প্রােটিনধর্মী হরমােন। ইনসুলিন দেহের প্রয়ােজন ছাড়া গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে দেহকে সঠিক পরিমাণের গ্লুকোজ সরবরাহে সাহায্য করে। গুরুত্বপূর্ণ এই হরমােনটি তৈরি হয় দেহের প্যানক্রিয়াস নামের অঙ্গে। বাংলায় প্যানক্রিয়াসকে বলে অগ্ন্যাশয়। অগ্ন্যাশয় পেটের পেছনে বাঁকাভাবে অবস্থিত। অর্থাৎ পাকস্থলীর পেছনের দিকে এর বিস্তৃতি। প্রতিটি মানুষের দেহে মাত্র একটি অগ্ন্যাশয় থাকে। অঙ্গটির আকৃতি অর্ধডিম্বাকৃতির। সামনের দিকে গােলাকার, পেছনের অংশ কোণাকৃতির। লম্বায় প্রায় ১৫ থেকে ২০ সেমি, চওড়া প্রায় তিন সেমি এবং প্রায় দুই সেমি প্রশস্ত। কালচে বাদামি বর্ণের অঙ্গটি প্রায় ৮০ থেকে ৯০ গ্রাম ওজনের। আমাদের দেহে অগ্ন্যাশয়ের কাজ।
***************************
১. ইনসুলিন ও গ্লুকাগন নামের গুরুত্বপূর্ণ হরমােন তৈরি করা। ইনসুলিন দেহের বেড়ে যাওয়া গ্লুকোজের মাত্রা কমায় আর গ্লকাগন দেহের কমে যাওয়া গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায়। গ্লুকোজ মানেই দেহের চিনির পরিমাণ। ২. এক ধরনের পাচকরস তৈরি করে, যা হজমে সাহায্য করে। অগ্ন্যাশয়ের শর্করা ও চর্বির পরিমাণ বেড়ে গেলে এর কার্যক্ষমতা হারিয়ে যায়। ফলে পাচকরস ইনসুলিন ও গ্লুকাগন তৈরিতে আসে অসাম্যাবস্থা। পরিণতিতে ইনসুলিন সঠিক পরিমাণে উৎপাদন না-হলে দেহের গ্লুকোজ তার মাত্রা হারিয়ে ফেলে। গ্লুকোজ অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় দেহে বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস রােগ হয়। আবার গ্লুকাগন অতিরিক্ত কমে গেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাও দ্রুত কমে যায়। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা সব সময়ই সাম্যাবস্থায় থাকতে হয়। অতিরিক্ত বেড়ে বা কমে যাওয়া দুটোই ক্ষতিকর। অগ্ন্যাশয়ের কে ভালাে রাখতে আমাদের করণীয়
**************************
১. দেহের প্রতিটি অঙ্গের জন্য পানির কোনাে বিকল্প নেই। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। এতে দেহের পাচকরসের সরবরাহ ঠিক থাকবে।। ফলে খাবার হজমে সহায়তা হবে। আবার খাবারের সঠিক হজমে পাকস্থলী ও পিত্তথলিতে পাথরের পরিমাণ কমবে, পাইলস দূর হবে। ২. অতিরিক্ত ফাস্টফুড, অ্যালকোহল ও মিষ্টিজাতীয় খাবার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায়। ফলে অগ্ন্যাশয়ে চর্বি জমে যায়। | চর্বি জমলে সঠিকভাবে ইনসুলিন, গ্লুকাগন তৈরি হয় না। দেহে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও কলেস্টেরলজনিত জটিলতা তৈরি হয়। তাই প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি, মৌসুমি ফল ও তিতা খাবার খান। ৩. খাবার ভালােভাবে চিবিয়ে খান। এতে মুখের লালা খাবারের সঙ্গে মিশে হজমে সাহায্য করবে। সঠিকভাবে পাচকরস তৈরি হবে। ৪. অতিরিক্ত পরিশ্রম ও অলসতা দুটোই বাদ দিতে হবে। ৫. ডায়াবেটিস এর রােগীরা দীর্ঘ সময় না-খেয়ে থাকবেন না। বিরতির সময় কমিয়ে সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তােলাটা জরুরী। ৬. দেহের ওজন সব সময় নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে । নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস গড়ে তােলা দরকার। আর পরিহার করতে হবে দুশ্চিন্তা। কারণ দুশ্চিন্তা সব অঙ্গের উপর ফেলে খারাপ প্রভাব। ৭) প্রতি বছর পুরাে দেহের চেকআপ করান। এতে অজানা কোন অসুখ থাকলে তা ধরা পড়বে। ৮) চিকিৎসক এর পরামর্শ ছাড়া দীর্ঘ বছর একই ডােজে ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেশার বা যে কোনাে অসুখের ওষুধ। খাবেন না।
ফারহানা মােবিন। চিকিৎসক, লেখক ও উপস্থাপিকা বারডেম হাসপাতাল। ঢাকা, বাংলাদেশ