” ইনসুলিন হরমােন এর কাজ “

ডায়াবেটিস রােগে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। যখন খাবার নিয়ন্ত্রণ বা ওষুধ এর মাধ্যমে এই মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে আনা যায় না তখন ইনজেকশনের মাধ্যমে ইনসুলিন দিতে হয়। ইনসুলিন একটি প্রােটিনধর্মী হরমােন। ইনসুলিন দেহের প্রয়ােজন ছাড়া গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে দেহকে সঠিক পরিমাণের গ্লুকোজ সরবরাহে সাহায্য করে। গুরুত্বপূর্ণ এই হরমােনটি তৈরি হয় দেহের প্যানক্রিয়াস নামের অঙ্গে। বাংলায় প্যানক্রিয়াসকে বলে অগ্ন্যাশয়। অগ্ন্যাশয় পেটের পেছনে বাঁকাভাবে অবস্থিত। অর্থাৎ পাকস্থলীর পেছনের দিকে এর বিস্তৃতি। প্রতিটি মানুষের দেহে মাত্র একটি অগ্ন্যাশয় থাকে। অঙ্গটির আকৃতি অর্ধডিম্বাকৃতির। সামনের দিকে গােলাকার, পেছনের অংশ কোণাকৃতির। লম্বায় প্রায় ১৫ থেকে ২০ সেমি, চওড়া প্রায় তিন সেমি এবং প্রায় দুই সেমি প্রশস্ত। কালচে বাদামি বর্ণের অঙ্গটি প্রায় ৮০ থেকে ৯০ গ্রাম ওজনের। আমাদের দেহে অগ্ন্যাশয়ের কাজ।
***************************
১. ইনসুলিন ও গ্লুকাগন নামের গুরুত্বপূর্ণ হরমােন তৈরি করা। ইনসুলিন দেহের বেড়ে যাওয়া গ্লুকোজের মাত্রা কমায় আর গ্লকাগন দেহের কমে যাওয়া গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায়। গ্লুকোজ মানেই দেহের চিনির পরিমাণ। ২. এক ধরনের পাচকরস তৈরি করে, যা হজমে সাহায্য করে। অগ্ন্যাশয়ের শর্করা ও চর্বির পরিমাণ বেড়ে গেলে এর কার্যক্ষমতা হারিয়ে যায়। ফলে পাচকরস ইনসুলিন ও গ্লুকাগন তৈরিতে আসে অসাম্যাবস্থা। পরিণতিতে ইনসুলিন সঠিক পরিমাণে উৎপাদন না-হলে দেহের গ্লুকোজ তার মাত্রা হারিয়ে ফেলে। গ্লুকোজ অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় দেহে বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস রােগ হয়। আবার গ্লুকাগন অতিরিক্ত কমে গেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাও দ্রুত কমে যায়। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা সব সময়ই সাম্যাবস্থায় থাকতে হয়। অতিরিক্ত বেড়ে বা কমে যাওয়া দুটোই ক্ষতিকর। অগ্ন্যাশয়ের কে ভালাে রাখতে আমাদের করণীয়
**************************
১. দেহের প্রতিটি অঙ্গের জন্য পানির কোনাে বিকল্প নেই। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। এতে দেহের পাচকরসের সরবরাহ ঠিক থাকবে।। ফলে খাবার হজমে সহায়তা হবে। আবার খাবারের সঠিক হজমে পাকস্থলী ও পিত্তথলিতে পাথরের পরিমাণ কমবে, পাইলস দূর হবে। ২. অতিরিক্ত ফাস্টফুড, অ্যালকোহল ও মিষ্টিজাতীয় খাবার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায়। ফলে অগ্ন্যাশয়ে চর্বি জমে যায়। | চর্বি জমলে সঠিকভাবে ইনসুলিন, গ্লুকাগন তৈরি হয় না। দেহে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও কলেস্টেরলজনিত জটিলতা তৈরি হয়। তাই প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি, মৌসুমি ফল ও তিতা খাবার খান। ৩. খাবার ভালােভাবে চিবিয়ে খান। এতে মুখের লালা খাবারের সঙ্গে মিশে হজমে সাহায্য করবে। সঠিকভাবে পাচকরস তৈরি হবে। ৪. অতিরিক্ত পরিশ্রম ও অলসতা দুটোই বাদ দিতে হবে। ৫. ডায়াবেটিস এর রােগীরা দীর্ঘ সময় না-খেয়ে থাকবেন না। বিরতির সময় কমিয়ে সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তােলাটা জরুরী। ৬. দেহের ওজন সব সময় নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে । নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস গড়ে তােলা দরকার। আর পরিহার করতে হবে দুশ্চিন্তা। কারণ দুশ্চিন্তা সব অঙ্গের উপর ফেলে খারাপ প্রভাব। ৭) প্রতি বছর পুরাে দেহের চেকআপ করান। এতে অজানা কোন অসুখ থাকলে তা ধরা পড়বে। ৮) চিকিৎসক এর পরামর্শ ছাড়া দীর্ঘ বছর একই ডােজে ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেশার বা যে কোনাে অসুখের ওষুধ। খাবেন না।
ফারহানা মােবিন। চিকিৎসক, লেখক ও উপস্থাপিকা বারডেম হাসপাতাল। ঢাকা, বাংলাদেশ