ইনসুলিন আসলে কী?

ডায়াবেটিস রোগে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। যখন খাবার নিয়ন্ত্রণ বা ওষুধের মাধ্যমে এই মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে আনা যায় না তখন ইনজেকশনের মাধ্যমে ইনসুলিন দিতে হয়। ইনসুলিন একটি প্রোটিনধর্মী হরমোন। ইনসুলিন দেহের প্রয়োজন ছাড়া গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে দেহকে সঠিক পরিমাণের গ্লুকোজ সরবরাহে সাহায্য করে। গুরুত্বপূর্ণ এই হরমোনটি তৈরি হয় দেহের প্যানক্রিয়াস নামের অঙ্গে। বাংলায় প্যানক্রিয়াসকে বলে অগ্ন্যাশয়।

অগ্ন্যাশয় পেটের পেছনে বাঁকাভাবে অবস্থিত। অর্থাৎ পাকস্থলীর পেছনের দিকে এর বিস্তৃতি। প্রতিটি মানুষের দেহে মাত্র একটি অগ্ন্যাশয় থাকে। অঙ্গটির আকৃতি অর্ধডিম্বাকৃতির। সামনের দিকে গোলাকার, পেছনের অংশ কোণাকৃতির। লম্বায় প্রায় ১৫ থেকে ২০ সেমি, চওড়া প্রায় তিন সেমি এবং প্রায় দুই সেমি প্রশস্ত। কালচে বাদামি বর্ণের অঙ্গটি প্রায় ৮০ থেকে ৯০ গ্রাম ওজনের।

আমাদের দেহে অগ্ন্যাশয়ের কাজ:

১. ইনসুলিন ও গ্লুকাগন নামের গুরুত্বপূর্ণ হরমোন তৈরি করা। ইনসুলিন দেহের বেড়ে যাওয়া গ্লুকোজের মাত্রা কমায় আর গ্লুকাগন দেহের কমে যাওয়া গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায়। গ্লুকোজ মানেই দেহের চিনির পরিমাণ।

Insulin

২. এক ধরনের পাচক-রস তৈরি করে, যা হজমে সাহায্য করে। অগ্ন্যাশয়ের শর্করা ও চর্বির পরিমাণ বেড়ে গেলে এর কার্যক্ষমতা হারিয়ে যায়। ফলে পাচক-রস ইনসুলিন ও গ্লুকাগন তৈরিতে আসে অসাম্যাবস্থা। পরিণতিতে ইনসুলিন সঠিক পরিমাণে উৎপাদন না-হলে দেহের গ্লুকোজ তার মাত্রা হারিয়ে ফেলে। গ্লুকোজ অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় দেহে বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস রোগ হয়। আবার গ্লুকাগন অতিরিক্ত কমে গেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাও দ্রুত কমে যায়। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা সব সময়ই সাম্যাবস্থায় থাকতে হয়। অতিরিক্ত বেড়ে বা কমে যাওয়া দুটোই ক্ষতিকর।

অগ্ন্যাশয়কে ভালো রাখতে আমাদের করণীয়:

১. দেহের প্রতিটি অঙ্গের জন্য পানির কোনো বিকল্প নেই। প্রচুর পানি পান করুন। এতে দেহের পাচক-রসের সরবরাহ ঠিক থাকবে। ফলে খাবার হজমে সহায়তা হবে। আবার খাবারের সঠিক হজমে পাকস্থলী ও পিত্তথলিতে পাথরের পরিমাণ কমবে, পাইলস দূর হবে।

২. অতিরিক্ত ফাস্টফুড, অ্যালকোহল ও মিষ্টিজাতীয় খাবার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায়। ফলে অগ্ন্যাশয়ে চর্বি জমে যায়। চর্বি জমলে সঠিকভাবে ইনসুলিন, গ্লুকাগন তৈরি হয় না। দেহে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও কলেস্টেরলজনিত জটিলতা তৈরি হয়। তাই প্রচুর শাকসবজি, মৌসুমি ফল ও তিতা খাবার খান।

৩. খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে খান। এতে মুখের লালা খাবারের সঙ্গে মিশে হজমে সাহায্য করবে। সঠিকভাবে পাচক-রস তৈরি হবে।

Insulin

৪. অতিরিক্ত পরিশ্রম ও অলসতা দুটোই বাদ দিতে হবে।

৫. ডায়াবেটিসের রোগীরা দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকবেন না। বিরতির সময় কমিয়ে সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলাটা জরুরি।

৬. দেহের ওজন সব সময় নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস গড়ে তোলা দরকার। পরিহার করতে হবে দুশ্চিন্তা। কারণ দুশ্চিন্তা সব অঙ্গের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে।

৭. প্রতি বছর পুরো দেহের চেকআপ করান। এতে অজানা কোনো অসুখ থাকলে তা ধরা পড়বে।

৮. চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া দীর্ঘ বছর একই ডোজে ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেশার বা যেকোনো অসুখের ওষুধ খাবেন না।

এইচএন/এএ/জেআইএম

করোনা ভাইরাসের কারণে বদলে গেছে আমাদের জীবন। আনন্দ-বেদনায়, সংকটে, উৎকণ্ঠায় কাটছে সময়। আপনার সময় কাটছে কিভাবে? লিখতে পারেন জাগো নিউজে। আজই পাঠিয়ে দিন – jagofeature@gmail.com

মানুষ মানুষের জন্য

সময়ের পরিক্রমায় একদিন আমরাও বৃদ্ধ হব। মাথার কালো চুলগুলো হয়ে যাবে সাদা । দেহের শক্ত হাড়গুলো হয়ে পড়বে দুর্বল। কপাল আর গালের মাংসপেশিতে ফুটে উঠবে বলিরেখা। আজ আমাদের নানা-নানি, দাদা-দাদি যে অবস্থায় আছেন, একদিন আমাদেরও সেই অবস্থা হবে।

আমাদের উচিত বয়স্কদের সম্মান করা। আমাদের কারো আচরণে তাঁরা যেন কষ্ট না পান, সেটা খেয়াল রাখতে হবে। কিশোর-তরুণ তোমরা যারা রাজধানীতে লেখাপড়া করছ, তোমরা অনেকেই ইংলিশ মিডিয়ামে লেখাপড়া করবে বা করছ। তোমাদের দাদা-দাদি, নানা-নানি বা পরিবারের বয়স্ক যাঁরা আছেন, তাঁরা তোমাদের মতো সুন্দরভাবে ইংরেজি বলতে পারেন না। তোমাদের মতো আধুনিকতার সঙ্গে বিভিন্ন দিবস উদযাপন করতে পারেন না। কারণ, তোমাদের স্কুল–কলেজগুলোতে বিশেষ বিশেষ দিবসে নির্দিষ্ট পোশাক পরতে হয়।

যেমন স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, পয়লা বৈশাখ, মাতৃভাষা দিবস, মা দিবস, বাবা দিবস ইত্যাদি। কিন্তু আমরা বা বয়স্ক যাঁরা আছেন, বৃদ্ধ হয়ে গেছেন, তাঁরা যখন ছাত্র বা ছাত্রী ছিলেন, তখন তাঁরা এই আনুষ্ঠানিকতাগুলো পালন করার সুযোগ পাননি। কারণ, তখন এসব রীতি ছিল না। তাই তোমাদের আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বৃদ্ধ যাঁরা আছেন, তাঁরা এই আয়োজনগুলো পছন্দ না–ও করতে পারেন বা তাঁদেরকে তোমাদের ব্যাকডেটেড মনে হতে পারে। কিন্তু তোমাদের এই মন-মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তোমরা ডিজিটাল যুগের ছেলেমেয়ে হলেও তোমাদের মন-মানসিকতা, চিন্তাচেতনা হতে হবে উদার।

পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষটি বা আত্মীয়স্বজনের প্রতি তোমাদের ব্যবহার, চিন্তাচেতনা এমন হতে হবে, যেন তোমাদের দেখে অনুপ্রাণিত হতে পারে তোমার ছোট ভাই বা বোন। তোমার দাদি বা দাদা হয়তো লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটেন। তুমি তাঁর পাশে দিয়েই যাচ্ছ, এই সময় তুমি বা তোমরা যদি তাঁর হাত ধরে একটু সহযোগিতা করো, তাহলে তাঁর খুব ভালো লাগবে। আজকে আমাদের লাঠিতে ভর দিতে হাঁটতে হচ্ছে না, কিন্তু জীবনে এমন একটা দিন আমাদের আসতেও পারে, যখন আমরা লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটব। আমাদের মেরুদণ্ডের হাড়টা বেঁকে দুর্বল হয়ে যাবে। আমরা সোজাভাবে চলাফেরা করতে পারব না।

আমরা যদি বাসার বৃদ্ধদের সঙ্গে ভালো আচরণ করি, তাঁদেরকে একটু সময় দিই, তাহলে তাঁরা খুশি হবেন। আমাদের সবারই একটা নিজস্ব জগৎ আছে। বাসার মা যিনি, তিনি রান্নাঘর, বাসার যাবতীয় কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। বাবা সাধারণত চাকরি বা ব্যবসা করেন বা পরিবারের খরচ চালানোর জন্য তাঁকে ব্যস্ত থাকতে হয়। তোমাদেরকে স্কুল বা কলেজের ক্লাস, কোচিং, সৃজনশীল কাজ নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। কিন্তু বাসার বয়স্ক সদস্যটির কোনো কর্মক্ষেত্র থাকে না। তাই তিনি একাকিত্ব বোধ করেন। আমরা সবাই নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকি। তাই তোমাদের সেভাবে সময় দেওয়া হয়ে ওঠে না। কিন্তু আমাদের একটু সহযোগিতা, বন্ধুত্ব, একটু সময় এই মানুষগুলোর জন্য হয়ে ওঠে স্বর্গীয় উপহার।

আর পরিবারের প্রিয় একজন সদস্যের জন্য ভালো কাজ করতে পারার আনন্দ আমাদের করবে মহান। বিশেষ বিশেষ দিবস ছাড়াও আমাদের কাছ থেকে পাওয়া একটি ছোট্ট উপহার পরিবারের নানা-নানি, দাদা-দাদিকে দেবে অনেক আনন্দ। তাঁরা একাকিত্বে ভোগেন খুব বেশি। তাঁদের পছন্দের কিছু উপহার দেওয়া বা ছুটির দিনে কোথাও বেড়াতে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে, যদি তাঁদের সামর্থ্য থাকে। এতে তাঁদের মানসিক প্রশান্তি মিলবে। তাঁরা দীর্ঘ সময় গৃহবন্দী থাকেন, তাই আমাদের একটু মনোযোগ, একটু ভালোবাসা আমাদের পরিবারের সব সদস্যের মধ্যে বাড়িয়ে তুলবে আরও বেশি মধুর সম্পর্ক। জীবন হবে শান্তিময়।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে বয়স্কদের বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খেতে হয়। ওষুধ খাওয়ার সময় তোমারা যদি তাঁদের ওষুধের বক্সটা বা এক গ্লাস পানি এগিয়ে দাও, তাহলে তাঁরা ভীষণ খুশি হন। নাতি-নাতনির কাছে ভালোবাসা পেতে সবার ভালো লাগে।

তোমারা যখন বাসায় থাকো, সে সময়ে যদি দাদা বা দাদির সঙ্গে গল্প করো বা কিছু সময় তাঁদের সঙ্গে বসে লুডু বা ক্যারম খেলো, তাহলে তাঁদের সময়টা ভালোভাবে কাটবে। কিছুটা সময় ভীষণ উপভোগ করবেন।

বাসাতে যদি লিফট থাকে, তাহলে তাঁকে লিফটে করে অল্প সময়ের জন্য ছাদে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। তোমাদের এই ধরনের ছোট ছোট ভালো কাজ পরিবারের মধ্যে গড়ে তুলবে বড় ধরনের ভালোলাগা।

লেখক : চিকিৎসক।

এইচআর/পিআর

করোনা ভাইরাসের কারণে বদলে গেছে আমাদের জীবন। আনন্দ-বেদনায়, সংকটে, উৎকণ্ঠায় কাটছে সময়। আপনার সময় কাটছে কিভাবে? লিখতে পারেন জাগো নিউজে। আজই পাঠিয়ে দিন – jagofeature@gmail.com

কাঁচা ছোলার পুষ্টিগুণ

রমজান মাসে ইফতারের সময় জনপ্রিয় খাবার হলো ছোলা বা বুট। আমাদের দেশে ছোলার ডাল নানাভাবে খাওয়া হয়।

কাঁচা, রান্না করে মুড়ির সঙ্গে বা ডাল হিসেবে। বাজারে তেলে ভেজেও বিক্রি হয়। সবচেয়ে বেশি পুষ্টি হলো কাঁচা ছোলাতে।

পানিতে ভেজানো ছোলার খোসা ফেলে কাঁচা আদা কুচি দিয়ে খেলে তা শরীরের জন্য জোগাবে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি।

মোটা ব্যক্তি বা উচ্চ রক্তচাপ আছে যাদের তারা কাঁচা ছোলা খান। তাদের জন্য অতিরিক্ত তেল, মসলা দেওয়া ছোলা হলো ঝুঁকিপূর্ণ।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে রান্না ছোলা খেতে পারেন নির্দিষ্ট পরিমাণে। যারা খোসাসহ ছোলা খেতে পারেন না, তাদের জন্য কাঁচা ছোলা যথেষ্ট উপকারী। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন বা আমিষ।

ছোলার খোসাতে আছে ফাইবার। ফাইবার জাতীয় খাবার রক্তে চিনির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

ছোলার প্রোটিন দেহকে করে দৃঢ়, শক্তিশালী, হাড়কে করে মজবুত, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এর ভূমিকা অপরিহার্য। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম। যা দেহের হৃৎপিণ্ডের গতিকে সচল রাখতে সাহায্য করে।

কিন্তু কিডনির সমস্যা যাদের রয়েছে (ডায়ালাইসিস চলছে, রক্তে ক্রিয়েটিনিন, ইউরিক এসিড বা ইউরিয়ার পরিমাণ বেশি) তারা চিকিৎসক এর পরামর্শ ছাড়া যেকোনো ধরণের ছোলা খাবেন না।

যেকোনো ডালে পটাসিয়াম থাকে, যা রক্তে পটাশিয়াম এর পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে। হাই ব্লাডপ্রেশার বা উচ্চ রক্তচাপ এর রোগীরা সীমিত পরিমাণে ছোলা খাবেন।

বাড়ন্ত শিশুদের দাঁত, হাড়, নখ, চুল, ত্বক এর পুষ্টির জন্য কাঁচা বা সিদ্ধ বুট ভীষণ উপকারি। তবে ছোটদের হজম শক্তি বড়দের তুলনায় দূর্বল থাকে। তাই তাদের জন্য সিদ্ধ বুট বেশি উপকারি।

গর্ভবতী নারীদের জন্য ছোলা বয়ে আনবে সুফল। মায়ের পেটে থাকাকালীন সময় থেকেই শিশুর গঠনের জন্য আমিষ অপরিহার্য।

তবে যেসব গর্ভবতী নারী উচ্চ রক্তচাপ, কিডনীর জটিলতা, উচ্চ মাত্রার ইউরিক অ্যাসিড এর সমস্যায় ভুগছেন, তারা চিকিৎসক এর পরামর্শ ছাড়া ইফতারে ছোলা খাবেন না।

পুষ্টির আশায় বেশি ছোলা হিতে বিপরীত হবে। তাই বয়স ও উচ্চতা অধিক ওজন থাকলে ছোলা কম খাওয়া উচিত।

করোনা মহামারীর জন্য লকডাউনের এই সময়ে হাঁটাচলার অভাবে যাদের ওজন বেড়ে গেছে, তারা ছোলা পরিহার করাই ভালো। কাঁচা বা সিদ্ধ ছোলা এর পরিবর্তে ফল বা সালাদ এর পরিমাণ বেশি হওয়া উচিত।

কাঁচা বা সিদ্ধ ছোলা রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে। তবে করোনা ভাইরাস এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, এই ধরনের যুক্তি এখনো কোন গবেষণা তে প্রমাণিত হয়নি।

এএ

করোনা ভাইরাসের কারণে বদলে গেছে আমাদের জীবন। আনন্দ-বেদনায়, সংকটে, উৎকণ্ঠায় কাটছে সময়। আপনার সময় কাটছে কিভাবে? লিখতে পারেন জাগো নিউজে। আজই পাঠিয়ে দিন – jagofeature@gmail.com

আমাদের মেডিকেল কলেজ

২০০২ সালের কথা। তখন আমি ছিলাম মেডিকেল কলেজের ছাত্রী। আমাদের মেডিকেল কলেজের ছাদটা ছিল খুব সুন্দর। ছাদটা ছিল রেলিংবিহীন। আমরা বিকেলে দলবেঁধে ছাদে উঠতাম। তখন মেডিকেল কলেজের চারিপাশে এত লোকালয়, দোকানপাট ছিল না। একপাশে ছিল ইতিহাসের সাক্ষী বিশাল বধ্যভূমি। একপাশে বুড়িগঙ্গা নদী আর একপাশে রাস্তাঘাট, কলেজ ক্যাম্পাসের পেছনের দিকে নৌকা চলত। ছাদের ওপর থেকে সেই দৃশ্যগুলো বিকেল বেলার দিকে অদ্ভূত সুন্দর লাগত, তা লিখে বোঝানোর নয়।

সূর্য ডুবে যাওয়া পর্যন্ত আমরা ছাদে থাকতাম। আমি পড়তাম মহিলা মেডিকেল কালেজে। দলবেঁধে কয়েকজন মিলে চায়ের মগ আর বিস্কুটের কৌটা নিয়ে ছাদে বসে থাকতাম। বধ্যভূমির পেছনে পালতোলা নৌকা চলত। সূর্যের আলোতে সেই দৃশ্যগুলো দেখে আমাদের মনে হতো যেন সমুদ্রসৈকতে বসে আছি। বুক ভরে নেয়া যেত সবুজ নিঃশ্বাস। আমাদের মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা জয়নুল হক শিকদার স্যার গাছ খুব পছন্দ করতেন। আমাদের ক্যাম্পাসটি সবুজেঘেরা। বিভিন্ন ধরনের গাছ রয়েছে আমাদের ক্যাম্পাসে। কলেজের প্রতিষ্ঠাতাকে আমরা বলতাম শিকদার আঙ্কেল।

তিনি শখের বশে ক্যাম্পাসে লাগিয়েছিলেন বহু প্রজাতির গাছ। তখন আমাদের মনে হতো, আমরা বাস করি সবুজেঘেরা একটি দ্বীপে। সন্ধ্যা হলেই আমরা ছাদ থেকে নেমে নিজেদের রুমে ফিরে যেতাম। হোস্টেলের বেলকোনি দিয়েও দেখা যেত খোলা আকাশ। আমরা পড়ার টেবিলে বসেই দেখতে পেতাম গোধূলির লালচে আকাশ দিয়ে ঝাঁকঝাঁক পাখি দলবেঁধে নীড়ে ফিরছে।

সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে প্রতিটি রুমে লাইট জ্বলে উঠত। কেউ পড়ত, কেউ গল্প করত, কেউ হেডফোন দিয়ে গান শুনত, এই ছিল আমাদের সন্ধ্যাবেলার দৃশ্য। দলবেঁধে কঙ্কাল আর মেডিকেলের মোটা মোটা বইয়ের মাঝে হারিয়ে যেত। সিনিয়র আপুরা পরীক্ষার আগে লেখাপড়া করত সারারাত জেগে। শুরুর দিকে হতাশ হয়ে ভাবতাম এ কোন জায়গায় আসলাম আমরা এত লেখাপড়া! চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম ছোটবেলা থেকেই কিন্তু মা, ভাই-বোনকে রাজশাহীতে রেখে হঠাৎ হোস্টেল জীবনের মাঝে হয়ে যেত খুব বেশি মন খারাপ।

farhana1

সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ক্লাস হতো। রুমে ফিরে খাবার খেয়ে ক্লান্ত দেহে ঘুমিয়ে পড়তাম। মাঝে মাঝে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখতাম “মা যেন বলছে সোনা কতদিন তোমাকে দেখি না, তুমি মন দিয়ে লেখাপড়া করো।” ক্লান্ত দেহটা পড়ে থাকত বিছানায় আর মনটা চলে যেত রাজশাহীতে আমার আত্মীয়-স্বাজনের কাছে। নতুন অভিজ্ঞতা, বিচিত্র সব পরিস্থিতি আর বারো রকমের মানুষের বসতি ছিল সেই হোস্টেলে।

মানুষ যে কত স্বার্থপর আর উদ্ভট হতে পারে তা হোস্টেলে না থাকলে বোঝা যায় না। কিছু নিবেদিতপ্রাণ ভালো মানুষের দেখা পেয়েছিলাম আমার হোস্টেল জীবনে। যারা আজও জড়িয়ে আছে আমার জীবনের সাথে। যেদিন ছাদে যেতে পারতাম না সেদিন আমরা দলবেঁধে রুমে চা খেতাম। চা ছাড়া আমরা একধাপ চলতে পারতাম না। চা খেতে খেতে দলবেঁধে রুমের সবাই মিলে গাইতাম সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদারের বিখ্যাত সেই গান “আমিতো মরে যাব, চলে যাব, রেখে যাব স্মৃতি এই শিকদার মেডিকেল কলেজে….।” সেই সময় এরশাদ শিকদার নামে বিখ্যাত এক সন্ত্রাসী ছিল।

আমাদের সময়ে কলেজের দ্বিতীয় তলায় মহিলা হোস্টেল আর প্রথম তলায় ছিল ক্লাসরুম। দ্বিতীয় তলায় তিনটা কুুকুর সারাদিন আর রাত পাহারা দিত। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত না হয়েও মনে হতো যেন হোস্টেলের সবকিছু বোঝে। বিশেষ করে মেয়েদের প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস। মেয়েদের দেখে পাশে এসে কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করে আবার চলে যেত। কিন্তু ছেলেদের দেখলেই করত চিৎকার। মাঝে মাঝে হোস্টেল সুপার উন্নতি আপা কুকুরগুলোকে বকা দিতেন।

একদিন রাতে আমাদের এক বান্ধবী ফুলপ্যান্ট, শার্ট পরে বাইরে বের হলো, আর সাথে সাথেই শুরু হলো কুকুরের তাড়া। কুকুরের দৃষ্টিভ্রম হয়েছিল। ভেবেছিল সেটা বোধহয় কোনো পুরুষ। কুকুরগুলো সারারাত জেগে থাকত। বুড়িগঙ্গার তীরঘেঁষে আমাদের কলেজ। কলেজের ডানপাশে রয়েছে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের বধ্যভূমি। রায়ের বাজারের এই বধ্যভূমি ৭১ এর যুদ্ধে এদেশের মানুষকে তাদের অম্লান আত্মত্যাগের কথা মনে করিয়ে দেয়।

farhana1

সেই নির্বাক কালো স্তম্ভটা যেন হাজারো কথা বলে যায় আমাদের কানে “শোনো, তোমরা স্বাধীন দেশের সন্তান, তোমরা আমাদের রক্তের বিনিময়ে এই কলেজ পেয়েছ। তোমরা আমাদের রক্তের মূল্য দিও। রাতের বেলা হেস্টেলের রেলিংয়ে দাঁড়াতাম। মনটা খুব খারাপ হলে- আকাশের তারা দেখতাম। সাদা আকাশের মাঝে হালকা মেঘের আনাগোনা আর তারই মাঝে উজ্জ্বল হয়ে যেত জোৎস্নার কিরণ। সাদার মেঘের সাথে চাঁদটাও যেন ভেসে চলত দূরদিগন্ত পানে। রূপালী আভা মনের বিষণ্নতা দূর করত।

নদীর মিষ্টি বাতাস হোস্টেলের রেলিংঘেঁষে যেত, কী যে ভালো লাগত! মনে হতো প্রকৃতি তার রেশম-কোমল হাত দিয়ে আমার মুখে অপার স্নেহ পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে। দূরে গাবতলী বাস টার্মিনালের লাল নীল সবুজ হলুদ লাইটগুলো জ্বলত। দূর আকাশের তারার মতোই লাইটগুলো ঝিকিমিকি করত। হারিয়ে যেত মনটা পুরোনো স্মৃতিতে। উদাস হয়ে যেতাম আমি। আমাদের হোস্টেল সুপারের নাম ছিল “উন্নতি”। উন্নতি নামটা আমি আজ পর্যন্ত আর কারও নাম হিসেবে শুনিনি।

কলেজের প্রতিষ্ঠাতা শিকদার স্যারের কিছু অ্যাপার্টমেন্ট ছিল আমাদের মেডিকেল কলেজের পেছনে। সেই অ্যাপার্টমেন্টের ছাদে উঠলে মতো হতো- চারিদিকে পানি আর মাঝে কলেজ। আমরা যেন সমুদ্রসৈকতে থাকি। বুড়িগঙ্গার একধারে উঁচু উঁচু বিল্ডিং আর অন্যধারে ছিন্নমূল মানুষের বসতি। হোস্টেলের ছাদে বসে অনুভব করা যেত দুইধারের জনবসতির মাঝে বিস্তর ব্যবধান।

farhana1

হসপিটালের একপাশে চলত নবজাতকের জন্ম, আবার আরেক পাশে ভীষণ গুরুতর রোগীদের মরতেও দেখা যেত। একপাশে মিষ্টির বাক্স আরেক পাশে কফিনের বাক্স। এটাই বাস্তবতা। আবার অনেকেই হাসিমাখা মুখে সুস্থ হওয়ার পর ফিরত বাসায়। আমাদের ক্যাম্পাসের একপাশে ছিল কেরালার সিস্টারদের বিল্ডিং। তাদের উচ্চতা, ভাষা, চেহারা প্রমাণ দিত যে, তারা আমাদের সংস্কৃতির মানুষ নয়। তারা ভিনদেশি মানুষ। আমি যখন মেডিকেল কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি, তখন মেডিকেল কলেজে একদল কেরালা সিস্টার ছিল। তারা ছিল ইন্ডিয়ার কেরালা প্রদেশের। বাংলাদেশি মেয়েদের থেকে তুলনামূলকভাবে লম্বা তারা।

আমাদের ক্যাম্পাসের মধ্যে ছিল ভীষণ সুন্দর একটি মসজিদ। মসজিদের দুই তলায় ছিল মেয়েদের নামাজের ব্যবস্থা। আরেক পাশে ছিল মাদরাসা, গরুর খামার, ন্যাশনাল ব্যাংক, আনসার ও সিকিউরিটি বাহিনীর থাকার জায়গা, ডেন্টাল কলেজ, নার্সিং কলেজ, ছোটদের জন্য ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। রাজধানী ঢাকার বুকে বিশাল, বিস্তৃত সবুজেঘেরা ছিল আমাদের মেডিকেল কলেজের ক্যাম্পাস।

একপাশে মেডিকেল কলেজ, একপাশে বিশাল হসপিটাল। হাসপাতালের জানালা দিয়ে মাঝে মাঝে দেখতাম বুড়িগঙ্গার পানি সূর্যের আলোতে চিকচিক করছে। অদ্ভূত সুন্দর সেই দৃশ্য লিখে বোঝানোর শক্তি আমার লেখনীতে নেই। বুড়িগঙ্গার তীরঘেঁষে ছিল আমাদের ক্যাম্পাস। চোখজুড়ানো দৃশ্যের জন্য প্রায়ই সিনেমার নায়ক-নায়িকাদের আমাদের ক্যাম্পাসে শুটিং করতে দেখা যেত। বিভিন্ন প্রোডাকশন হাউজ আমাদের ক্যাম্পাসকে শুটিং স্পট হিসেবে ব্যবহার করত।

farhana1

আমাদের শিকদার আন্টি (শিকদার আঙ্কেলের স্ত্রী) খুব শখ করে জনবল নিয়োগ করে সবজি চাষ করতেন। ক্যাম্পাসের একপাশে ক্ষেতের মধ্যে ফরমালিন ছাড়া টাটকা ফুলকপি, বাঁধাকপি, লালশাক, পালংশাক দেখে মনে হতো যেন সবজি নয়, ক্ষেতের মধ্যে শোপিস। আমরা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা স্যারের স্ত্রীকে বলতাম আন্টি। মাঝে মাঝে সবাই মিলে বলতাম, “যদি আল্লাহর বেহেশত বিক্রি হতো, তাহলে শিকদার আঙ্কেল সেই বেহেশত কিনে ফেলতেন।” তিনি ছিলেন ভীষণ সৌখিন মানুষ। শুক্রবারে ক্যাম্পাসের মসজিদে নামাজ শেষে, অগণিত অসহায় মানুষকে দান করতেন। আমাদের মসজিদে দূর-দুরান্ত থেকে অনেকেই নামাজ পড়তে আসতেন।

অদ্ভূত সুন্দর এই ক্যাম্পাসে থেকেও হতাশ হয়ে যেতাম আমার মা, ভাই-বোনের কথা ভেবে। তখন তারা থাকত রাজশাহীতে। আমার মনটা তাদের জন্য ছটফট করত। শুধু মনকে এই বলে সান্ত্বনা দিতাম যে, “আমাকে সামনে যেতে হবে, বড় ডাক্তার হতে হবে, আমার মা-বাবা আমাদের জন্য সীমাহীন বিসর্জন দিয়েছে, তাদের স্বপ্ন পূর্ণ করতেই হবে।”

সুখ-দুঃখ-ব্যথা নিয়েই ছিল আমাদের এই শিকদার মেডিকেল কলেজ। আমার পেশাজীবনের প্রথম ধাপ। নতুন অভিজ্ঞাতা আর নতুন পথচলার স্থান ছিল সেটি। ভালো লাগুক বা নাই বা লাগুক ওই বুড়িগঙ্গার বহমান পানির মতো পূর্বপরিচিত মানুষদের ছেড়ে আমাকে যেতে হবে আরও দূরে… আরও দূরে। সারাজীবন এই প্রতিজ্ঞা করেছি। আজ বিখ্যাত কবি রবার্ট ফ্রস্টের ভাষায় আমিও বলতে চাই…
“And miles to go before I sleep
And miles to go before I sleep.”

বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর নেপথ্যের কথা

যুগে যুগে কিছু মানুষ পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেন যে মানুষগুলো তাদের কর্মগুণে বেঁচে থাকা অবস্থায়ই হয়ে ওঠেছেন কিংবদন্তী। এমনই কিছু বিশাল বটবৃক্ষ হলেন বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বীর নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা, মমতাময়ী জগত বিখ্যাত নারী মাদার তেরেসা, অমর বিপ্লবী নেতা চে গুয়েভারা, আমেরিকার প্রয়াত প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন প্রমুখ। যুগে যুগে পৃথিবীতে এই মানুষগুলোর কর্মগুণ, নেতৃত্ব, মানুষকে ভালো কাজে অনুপ্রাণিত করেছে। এই মানুষগুলোর জীবন যাপন পদ্ধতি, তাঁদের আদর্শ আমাদের জন্য হয়ে উঠেছে আলোর মশাল।

আমাদের বাংলাদেশের জন্য এমনই একজন আলোর মশাল হলেন জাতির জনক বীর নেতা, সংগঠক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যে মানুষটি পৃথিবীতে জন্ম না নিলে পৃথিবীর ইতিহাসে লাল সবুজ এর পতাকার জন্ম হতোনা। আমরা পশ্চিম পাকিস্তানের দাস হয়েই থাকতাম। আমরা কোনও দিন মাথা উঁচু করে সার্বভৌম দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতামনা। আমাদের বীর নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তিনি জন্ম গ্রহণ করেন ১৯২০ সালে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিভাগে লেখাপড়া করেন।

 সীমাহীন পরিশ্রম আর ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে অবশেষে মহামূল্য এই স্মৃতি কথাগুলো মুদ্রণে রূপ নেয়। “অসমাপ্ত আত্মজীবনী” নামে জাতির হাতে পৌঁছে যায় এক চেতনার ইতিহাস, এক মহান নেতার স্বপ্নগাথা। ‘‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী” শুধুমাত্র একটি বই নয়, এটি একটি জীবন্ত দলিল, সোনার অক্ষরে মুদ্রিত মহান এক দেশপ্রেমী নেতার জীবনদর্শন। বইটি দেশ গড়বার জন্য বিরল এক দিকনিদের্শনা। 

১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম নেতা তিনি। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে ১৯৭০ সালের জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনে তাঁর রাজনৈতিক দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে নির্বাচিত হয়। এই অর্জন ছিল স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি রাষ্ট্রের জন্মের জন্য অন্যতম মাইলফলক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন কিংবদন্তী নেতা, একজন বড় মাপের সংগঠক, একজন সুবক্তা। লেখালেখিতেও তিনি ছিলেন ভীষণ পারদর্শী। তাঁর লেখা বই “অসমাপ্ত আত্মজীবনী” শুধু মাত্র বই নয় জাতির দিক নির্দেশনার এক জীবন্ত দলিল।

২০০৪ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য সন্তান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তাঁর পিতার লেখা চারটি খাতা এসে পৌঁছে। খাতাগুলোর পৃষ্ঠা জুড়ে সময়ের বিবর্তন অক্ষরগুলো প্রায়ই অস্পষ্ট, লালচে হয়ে যাওয়া পাতা। পিতার প্রিয় সন্তান মাননীয় শেখ হাসিনা মুহূর্তেই তাঁর পিতার হাতের লেখাগুলো চিনে ফেললেন। খাতা চারটা হাতে নিয়ে বাঁধভাঙ্গা কান্না আবেগ তাকে আচ্ছন্ন করে ফেললো। ছোট বোন শেখ রেহানাকে খাতাগুলো দেখালেন। পাহাড় সম শোক, পরিবারকে হারানের ব্যথা অশ্রুধারা হয়ে ঝরতে থাকলো দুই বোনের চোখ দিয়ে। খাতা চারটি ছিল বঙ্গবন্ধুর লেখা আত্মজীবনী।

১৯৬৭ সালের মাঝের দিকে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে বন্দী থাকাকালীন সময়ে তাঁর লেখা তিনি লিখে শেষ করতে পারেননি। লেখাগুলো শুধু মাত্র লেখা নয় সেসব ছিল একজন মহীরুহের প্রবল দেশ প্রেম, মানবপ্রেম আর চেতনার আলোয় আলোকিত এক প্রামাণ্য চিত্র। যে প্রামাণ্য চিত্র লেখা হয়েছে প্রবল দেশপ্রেম, মানব প্রেম, দেশের মানুষকে পশ্চিম পাকিস্তানীদের আগ্রাসন থেকে রক্ষা করার জন্য শপথ, খাতা চারটির পাতাগুলো ছিল একেবারেই জরাজীর্ণ। একটু আঘাত লাগলেই ছিড়ে যাবে এমন করুণ অবস্থা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট (হত্যার উদ্দেশ্যে) বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের এক সমাবেশে চালানো হয় গ্রেনেড হামলা, হামলায় আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আইভী রহমান সহ মোট চব্বিশজন মারা যান। সৌভাগ্যবশত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেঁচে যান। তিনি চোখের সামনে চব্বিশজন মানুষকে হারানের শোকে কাতর হয়ে পড়েন। দুঃখ কষ্টের সাগরে তিনি যখন ভাসছিলেন ঠিক তখনই এই চারটা খাতা উনার হাতে এসে পৌঁছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এক ফুফাতো ভই সেই চারটা খাতা উনাকে দেয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আরেক ফুফাতো ভাই হলেন শেখ ফজলুল হক মনি। তিনি ছিলেন বাংলার বাণীর সম্পাদক। উনার অফিসের টেবিলের ড্রয়ার থেকে পাওয়া গিয়েছিল সেই চারটা খাতা। ধারণা করা হয় বঙ্গবন্ধু হয়তো লেখাগুলো টাইপ করতে দিয়েছিলেন বই প্রকাশের জন্য।

খাতা চারটার মধ্যে ছিল বঙ্গবন্ধুর বংশ পরিচয় স্কুল-কলেজ, শিক্ষা জীবনের পাশাপাশি সামাজিক, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, দেশের জন্য চিন্তা-চেতনার প্রতিফলন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দেশের অভাব, বিহার, কলকাতার দাঙ্গা, দেশভাগ, প্রাদেশিক মুসলীম ছাত্রলীগ ও মুসলীমলীগের রাজনীতি সহ বিভিন্ন বিষয়ের বর্ণনা। দেশ ভাগ হয়ে যাবার পর থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত পূর্ব বাংলার রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, দেশের মানুষের জীবনযাপনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ছিল খাতাগুলোর প্রতিটি লেখা জুড়ে। খাতার পাতাগুলো এতো নরম হয়ে গেছিল যে হাত দিলেই ছিড়ে যাবে, এমন একটা অবস্থা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, তার ছোট বোন শেখ রেহানা, সাংবাদিক বেবী মওদুদসহ আরো কয়েকজন পালাক্রমে লেখাগুলোকে খুব সাবধানে ফটোকপি করে বার বার পড়েছেন। কারণ অধিকাংশ লেখা ছিল ভীষণ ঝাপসা। কোথাও কোথাও লেখা ছিল একেবারেই অস্পষ্ট। ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে লেখা উদ্ধারের কাজ করতে হয়েছিল।

book

খাতাগুলোর লেখা পড়তে যেয়ে অগণিত বার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শেখ রেহানা চোখের জলে ভাসতেন। শেখ রেহানা অসংখ্যবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন, হলদে পৃষ্ঠা গুলোতে হাত বুলিয়ে উপলব্ধি করার চেষ্টা করতেন পিতার আঙ্গুলের স্পর্শ। বড় বোন শেখ হাসিনা বরাবরের মতোই শেখ রেহানার ভরসার আশ্রয়স্থল হয়ে ছোট বোনকে সান্ত্বনা দিয়েছেন। বাবার লেখা আত্মজীবনী পড়তে যেয়ে বার বার স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েছেন। অদম্য ইচ্ছা পিতৃ প্রেম আর দেশের মানুষকে মহান এক নেতার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার মহৎ ইচ্ছা থেকেই প্রকাশ পায় বঙ্গবন্ধুর লেখা। “অসমাপ্ত আত্মজীবনী” বইটির পুরো লেখা জুড়ে প্রবল দেশপ্রেম। জেলখানায় বন্দী অবস্থায় থেকেও দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন, পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করে জ্বলছে।

একজন মানুষ দেশের মানুষকে ভালোবেসে নিজের জীবনের জন্য কতোটা ঝুঁকি নিতে পারেন জেল নির্যাতন কতোটা সহ্য করেছেন, মানুষের কল্যাণে নিজেকে কিভাবে বিসর্জন দিয়েছেন, লেখাগুলো সেই প্রত্যয়ের কথাই বলে। বহুবিধ তথ্যের সমৃদ্ধ এই বইটিতে পাকিস্তান আন্দোলন ভাষা আন্দোলন বাঙালির স্বাধীনতা, অধিকারের আন্দোলন, এই দেশের মানুষকে ধ্বংস করে দেবার জন্য পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর বিভিন্ন ধরনের চক্রান্তের ঘটনার উল্লেখ রয়েছে এই বইয়ে। প্রধানমন্ত্রীর মতে, এই বই এর ঘটনাগুলোর সূত্রধরে অনেক অজানা ঘটনার গবেষণা করা সম্ভব। খাতাগুলোতে জেলারের সাক্ষর দেয়া অনুমোদনের পৃষ্ঠাগুলো অক্ষত ছিল। তারিখগুলো দেখে ঘটনার ব্যাখ্যা, বিস্তৃতি, লেখার সম্পাদনার কাজে সুবিধা হয়েছিল। লেখাগুলোর সম্পাদনা, সংশোধন এর কাজ করেছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সাংবাদিক বেবী মওদুদ। এর পরে অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, প্রধানমন্ত্রী এবং বেবী মওদুদ পান্ডুলিপির সম্পাদনা, প্রুফ দেখা, টিকা লেখা, স্ক্যান, ছবি নির্বাচনের কাজগুলো সম্পন্ন করেন। সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন শেখ রেহানা।

এই গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত লিখেছেন। ১৯৬৬-৬৯ সালে কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজবন্দী থাকাকালীন সময়ে একান্ত নিরিবিলিতে তিনি লিখেছেন জাতির জন্য অমূল্য এক ইতিহাস। আত্মজীবনী প্রকাশের ইচ্ছা থেকেই তিনি তার এই চারটা খাতার লেখাগুলো টাইপ করতে দিয়েছিলেন কিন্তু তিনি ঘাতকদের হাতে মারা যান। তাই বইটি আর প্রকাশ পায়নি। ভাগ্যের বিম্ময়কর খেলায় লেখাগুলো দীর্ঘ বছর পরে ২০০৪ সালে এসে পৌঁছে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যার হাতে।

সীমাহীন পরিশ্রম আর ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে অবশেষে মহামূল্য এই স্মৃতি কথাগুলো মুদ্রণে রূপ নেয়।“অসমাপ্ত আত্মজীবনী” নামে জাতির হাতে পৌঁছে যায় এক চেতনার ইতিহাস, এক মহান নেতার স্বপ্নগাথা। ‘‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী” শুধুমাত্র একটি বই নয়, এটি একটি জীবন্ত দলিল, সোনার অক্ষরে মুদ্রিত মহান এক দেশপ্রেমী নেতার জীবনদর্শন। বইটি দেশ গড়বার জন্য বিরল এক দিকনিদের্শনা।

এইচআর/জেআইএম

করোনা ভাইরাসের কারণে বদলে গেছে আমাদের জীবন। আনন্দ-বেদনায়, সংকটে, উৎকণ্ঠায় কাটছে সময়। আপনার সময় কাটছে কিভাবে? লিখতে পারেন জাগো নিউজে। আজই পাঠিয়ে দিন – jagofeature@gmail.com

শিশুরা যেভাবে খাঁচায় বন্দি হচ্ছে

রাজধানী ঢাকা এখন যান্ত্রিক বাতাসে পূর্ণ। এ যান্ত্রিকতার শিকার হচ্ছে শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই। ঢাকার বাইরের শিশুরা খেলাধুলার সুযোগ পায়। কিন্তু ঢাকার শিশুরা অধিকাংশই থাকে গৃহবন্দি। খেলার মাঠ নেই, হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে তাদের বাসার বাইরে যেতে দেওয়া হয় না। স্কুলগুলোও অধিকাংশ ক্ষেত্রে একটি ভবনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। বাবা-মায়েরা নিরুপায় হয়ে বাসায়ই শিশুকে বন্দি করে রাখেন। আমাদের সমাজে অধিকাংশ মায়েরা এখনো বাসার বাইরে কাজ বা চাকরি করেন না।

দেখা যায়, মা হয়তো রান্নাঘরের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। শিশুটি বাসায় থাকলেও সে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাব নিয়ে খেলতে থাকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সে এসব যন্ত্র নিয়ে ভিডিও গেম খেলে। যা একজন শিশুর চোখের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। আর স্কুলের পড়া তো আছেই। স্কুলগুলোতে এখন লেখাপড়ার পাহাড়। চারিদিকে তুমুল প্রতিযোগিতা।

শিশুদের সকালে স্কুল, সন্ধ্যায় হুজুর, তারপর বাসায় শিক্ষক পড়াতে আসেন। বাসার শিক্ষক পড়িয়ে চলে যাওয়ার পর তাড়াতাড়ি ঘুমোতে যাওয়ার প্রস্তুতি। অনেক পরিবারে বাবা-মা দু’জনই শিশুকে পড়ায়। আবার কিন্ডার গার্টেন স্কুল থেকে মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তির জন্য অনেকেই কোচিং করে। অর্থাৎ সেসব শিশুর বিকেলের খেলার সময়ও হারিয়ে যায়।

লেখাপড়ার চাপ এতো বেশি যে, কিছু কিছু পরিবারের বাবা-মাও ছেলে-মেয়ের সাথে পড়তে বসেন। রাজধানী ঢাকার স্কুলগুলোর আশেপাশে দেখা যায়, কিছুসংখ্যক মা স্কুলগুলোর বাইরে স্কুল ছুটি না হওয়া পর্যন্ত বসেই থাকেন। রাস্তার জ্যাম ঠেলে বারবার বাসা থেকে যাওয়া-আসাটা অসুবিধা, তাই স্কুলের বাইরে রাস্তাতেই বসে থাকতে দেখা যায়।

Child

অনেক শিশুর স্কুল শেষে কোচিং, কোচিং শেষে বাসায় যায়। সকাল বেলা বাসা থেকে বের হয়, স্কুল তারপর কোচিং শেষে রাস্তার জ্যাম ঠেলতে ঠেলতে বাসায় ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। এ দৃশ্য হলো নগরী ঢাকার।

ঢাকার বাইরের শিশুরাও লেখাপড়ার ভীষণ চাপে থাকে। তবে তারা খেলার সুযোগ পায়, ঢাকার বাইরের শিশুদের খেলার মাঠ আছে। স্কুলগুলোতেও খেলার মাঠ থাকে। সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হচ্ছে ঢাকার শিশুরা। তারা স্কুল কোচিং অথবা শিক্ষকের বাসায় প্রাইভেট পড়ে বাসায় ফিরে রাতে মা-বাবা বা শিক্ষকের কাছে আবারও পড়তে বসে। এ হচ্ছে তাদের নিয়তি। খেলার সময় আর ঘুমানের অভাবে মা অথবা বাবার মোবাইল ফোনটা নিয়েই গেম খেলতে থাকে।

নাস্তা হিসেবে খায় ফাস্টফুড। কয়েক বছর আগে বাসায় স্থায়ীভাবে গৃহকর্মী পাওয়া যেত। এখন তা-ও তেমন সহজলভ্য নয়। ফলে মায়েরাও অনেক সময় শিশুর টিফিন বা নাস্তার জন্য নিরুপায় হয়ে ফাস্টফুডে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন। একদিকে খেলার মাঠের অভাব, অন্যদিকে নিয়মিত ফাস্টফুডের জন্য অনেক শিশু স্থূলতার সমস্যায় ভুগছে। বছরের পর বছর এ অবস্থার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। পরিনামে শিশুরা অকালেই ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের উর্বর ক্ষেত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।

পরিবেশ-পরিস্থিতি, সুযোগ-সুবিধার অভাবে মানুষ সন্তানকে খেলার জন্য ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, ট্যাব দিচ্ছেন। দৈহিক পরিশ্রমের চেয়ে মানসিক পরিশ্রম হচ্ছে বেশি। এ ধরনের শিশুরা বড় হয়ে একটুতেই হতাশায় ভোগে। পরীক্ষায় ভালো নম্বর হয়তো পায় কিন্তু তারা বাস্তববাদী হতে পারে না। মানুষের সাথে মেশার সুযোগ তাদের হয় না। তাই বাস্তবতা থেকে তারা একটু একটু করে দূরে সরতে থাকে। আর যেসব শিশু ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন পরিবেশে যায়, বিভিন্ন মানুষের সাথে মেশার সুযোগ পায়, তারা জীবনের বড় ধরনের দুঃখ-কষ্টগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে শেখে।

Child-1

আমরা রাজধানী ঢাকার বাবা-মায়েরা খুব বেশি অসহায়। আমাদের নিরুপায় হয়ে সন্তানদের যান্ত্রিক বানিয়ে ফেলতে হচ্ছে। লেখাপড়ার বোঝা, প্রতিযোগিতার তীব্রতা পিতা-মাতাকে বাধ্য করছে শিশুদের যান্ত্রিক বানাতে। বছরের পর বছর এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। একটি শিশু এভাবে ডিজিটাল ব্রয়লার শিশুতে পরিণত হচ্ছে। যা কখনোই কাম্য নয়।

এ অবস্থা ভবিষ্যতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদের এই ঝুঁকি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সরকারকে পাঠ্যসূচির পরিমাণ আরও কমিয়ে আনতে হবে। বহির্বিশ্বের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা কিভাবে আরও উন্নত হবে, তা চিন্তা করতে হবে।

মিডিয়াগুলোকে আরও বেশি সোচ্চার হতে হবে। গ্রামাঞ্চলের শহরতলীর শিশুরা শহরের শিশুদের মতো বন্দি জীবনযাপন করে না। কিন্তু নগরীর শিশুরা স্বাভাবিক জীবন থেকে খুব বেশি বঞ্চিত। তারা ডিজিটালভাবে বড় হচ্ছে, কিন্তু হারিয়ে ফেলছে প্রাণ। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় ঢাকার ডিজিটাল শিশুরা অনেকেই সৃজনশীল কাজের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। যেমন- ড্রইং, আবৃত্তি, গান, নাচ, জুডো কারাতে খেলা। বাবা-মার উচিত তাদের এ শখের কাজগুলোয় মানসিক চাপ না দেওয়া। অন্তত শখের কাজে তাদের স্বাধীনতা দেওয়া দরকার।

অনেক বাবা-মা শিশুদের মেরে, বকাঝকা দিয়ে, চাপ দিয়ে পড়ান- যা উচিত নয়। এমনিতেই তাদের আমরা মুক্ত বাতাসে খোলা আকাশের নিচে বড় হতে দিতে পারছি না। হারিয়ে যাওয়ার ভয়, মাদকের ভয়াবহ আক্রমণ থেকে দূরে সরানোর জন্য সব বাবা-মা ভীষণ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।

ব্রয়লার মুরগি যেভাবে খাঁচায় বন্দি থাকে; আমাদের শিশুরাও সেভাবেই খাঁচায় বন্দি। নির্দিষ্ট সময়ে স্কুল, কোচিং, হুজুরের কাছে আরবি পড়া, ফাস্টফুড খাওয়া, ভিডিও গেম, কার্টুন হলো তাদের শখের অন্যতম মাধ্যম।

যদি আমাদের শিশুদের উপযুক্ত পরিবেশ দিতে না পারি, তাহলে তারা সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারবে না। এ অবস্থা থেকে বাবা-মা অভিভাবকদের বের হতে হবে। একটি শিশুকে আমরা যদি সুবিধামতো গড়তে পারি, তাহলে সেই শিশুটিই হবে আগামীর কর্ণধার।

Child-2

আমাদের শিশুরা যেন ব্রয়লার শিশু হয়ে গড়ে না ওঠে, তার দিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। বাবা-মাদের চেষ্টা করতে হবে, আমাদের শিশুদের লেখাপড়ার চাপ থেকে মুক্ত রাখতে হবে। ভালো ফলাফলের জন্য বকাঝকা বা জোর করে পড়ানো অনুচিত। তাদের বোঝাতে হবে, জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য লেখাপড়া প্রয়োজন। আর ছুটির দিনগুলোয় বাসার মানুষকে চেষ্টা করতে হবে, তাদের কোথাও বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার জন্য, এতে তাদের মন প্রফুল্ল হবে।

চেষ্টা করতে হবে, বিভিন্ন গেম-কার্টুনের পরিবর্তে গল্পের বইয়ে অভ্যস্ত করা। সেটা হবে তাদের জন্য ভীষণ উপকারী এক কাজ। আজকের শিশুরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সমৃদ্ধ করার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ডিজিটাল ব্রয়লার শিশু নয়, আমাদের গড়তে হবে সবুজ-সরল শিশু।

শিশুদের বানাতে হবে ভবিষ্যতের যোদ্ধা শিশু হিসেবে। আমরা সম্মিলিতভাবে যদি চেষ্টা করি, তাহলে মানুষের মন-মানসিকতার পরিবর্তন করা এবং অবস্থার পরিবর্তন ঘটানো আমাদের পক্ষে সম্ভব।

পিঁপড়া থেকে শেখার আছে অনেক কিছু

পিঁপড়া পৃথিবীর আদিতম প্রাণিগুলোর একটি। ক্ষুদ্রতর প্রাণির মধ্যেও পিঁপড়া অন্যতম। কিন্তু এ ক্ষুদ্র প্রাণির কাছ থেকে আমাদের শেখার আছে অনেক কিছু। কর্ম বৈশিষ্টের জন্য ক্ষুদ্র প্রাণিটিকে অনেক সময় উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পিঁপড়া বহুবিধ গুণে গুণান্বিত।

দলবদ্ধতা: পিঁপড়া সব সময় দলবদ্ধ হয়ে চলতে পছন্দ করে। পিঁপড়াদের একাত্মতাবোধ খুব বেশি। খাবার জোগাড় করা বা যেকোনো কাজের সময় দলবদ্ধ হয়ে চলাফেরা করে। দলনেতা হলো রানি পিঁপড়া। রানি পিঁপড়াকে মেনে চলে সবাই। লাইন ধরে চলাফেরা করে। নিজেদের দুঃখ-কষ্ট পরস্পরের মধ্যে শেয়ার করে। শীতকালের জন্য খাবার গরমের দিনে কে কতটা জোগাড় করল, আর কতটা জোগার করতে বাকি, তা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয়।

দূরদর্শিতা: পিঁপড়া ভীষণ দূরদর্শী। সারা বছর পরিশ্রম করে শীতকালের খাবার জোগাড়ের জন্য। শীতকালে ঠান্ডার জন্য খাবার সংগ্রহে কষ্ট হবে বলে সারা বছর খাবার জোগার করে। বিপদ থেকে বাঁচার জন্য দলবেঁধে চলাফেরা করে। কোনো বিপদের কথা শুনলে মুহূর্তের মধ্যে সে তথ্য সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়। আমরা যদি আমাদের বিপদের দিনের জন্য সাধ্যমতো সঞ্চয় করি, তাহলে আমরা উপকৃত হবো। আর জীবনে জয়ী হওয়ার জন্য শুধু নিজের বুদ্ধি দিয়ে চললে হবে না। অন্যদেরও বুদ্ধি-পরামর্শ আমাদের কাজে লাগবে।

অক্লান্ত পরিশ্রমী: ক্ষুদ্র এ প্রাণী অক্লান্ত পরিশ্রমী। পিঁপড়ার দেহের ওজনের তুলনায় ২০ গুণ বেশি ওজন বহন করতে পারে। পৃথিবীতে প্রায় ১০ হাজার প্রজাতির পিঁপড়া রয়েছে। সব প্রজাতির পিঁপড়াই পরিশ্রমী। আমরা যদি আমাদের মেধার সাথে শ্রমকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করি, তবেই সফলতা সম্ভব। অলস ব্যক্তিরা কখনো সফল হতে পারে না। তাদের মেধা থাকলেও পরিশ্রমের অভাবে সবার পেছনে পড়ে থাকে।

ant-cover

দক্ষ সংগঠক: প্রতিটি পিঁপড়ার মধ্যে রয়েছে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রবল মেধা। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত, দলের পরস্পরের প্রতি মায়া-মমতা, দূরদর্শিতার জন্য মিলিয়ন বছর আগের এ প্রাণি পৃথিবীতে এখনো টিকে আছে। তাদের রয়েছে চরম শৃঙ্খলাবোধ। তাদের গোত্রের সবার কাজ ভাগ করা থাকে, কেউ অলসভাবে দিন কাটায় না। তাই আমরা যদি পরিবারের পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে মিলেমিশে থাকার চেষ্টা করি, অন্যের বিপদে তাদের পাশে দাঁড়াই, তাহলে এর সুফল আমরাই ভোগ করবো। কাকে কখন কাজে লাগবে, আমরা কেউ জানি না। কার জীবনে কখন কী বিপদ হবে, সব অনিশ্চিত। তাই আমাদের উচিত পিঁপড়ার বিদ্যাকে কাজে লাগানো।

উদারতা: উদারতার অভাবে জগৎ-সংসারে প্রচুর অশান্তি হয়। রক্তের সম্পর্কের আপনজন পর্যন্ত দূরে সরে যায়। পিঁপড়া সহকর্মীদের প্রতি ভীষণ উদার। একজনের জোগার করা খাবার শর্তহীনভাবে অন্যকে দেয়। দুঃখ-কষ্ট, সফলতা, খাবার পরস্পরের সঙ্গে ভাগ করার প্রবণতা এ প্রাণির মধ্যে সত্যিই প্রশংসনীয়। পিঁপড়ার উদারতার পাশাপাশি শৃঙ্খলাবোধ ভীষণ প্রশংসনীয়। তাই জীবনে শান্তি নিয়ে বাঁচতে হলে চারপাশের মানুষের উপকার করতে হবে। অবশ্য সব সময় সম্ভব হয় না। তবে কারো বিপদে অন্তত একটু ভালো কথা বলে সাহস-সান্ত্বনা দেওয়াটাও হতে পারে সেই মানুষের জন্য উপকার। অন্যের বিপদে ব্যথা অনুভব করার জন্য আপনাকে হতে হবে উদার। উদার চিন্তা-চেতনা ছাড়া মানুষ অন্যের পাশে দাঁড়াতে পারে না।

সহনশীলতা: পিঁপড়ার দুটি পাকস্থলী। একটি পাকস্থলীতে সে তার খাবার নিজের জন্য, আরেকটাতে খাবার জমিয়ে রাখে অন্যদের জন্য। শর্তহীনভাবে পিঁপড়া তাদের খাবার গোত্রের অন্য পিঁপড়াকে দেয়। তাই আমরা যদি অবশিষ্ট খাবার, পুরোনো কাপড় ফেলে না দিয়ে বা আলমারিতে বন্দি না করে অসহায় মানুষকে দেই, তাহলে অন্তত কিছু মানুষের উপকার হবে।

পরোপকারিতা: পিঁপড়া পরের উপকার করতে প্রস্তুত থাকে। কোথাও কোনো মানুষ বা প্রাণি তাদের কাউকে আঘাত করলে বা কোন বিপদ সংকেত পেলে মুহূর্তের মধ্যে অন্য পিঁপড়াকে জানিয়ে দেয়। অন্য পিঁপড়ার উপকার করার জন্য তারা সব সময় প্রস্তুত থাকে। একজন কোনো বিপদ সংকেত পেলে তা মুহূর্তের মধ্যে সবার মাঝে ছড়িয়ে যায়। তখন তারা দল ভেঙে ছুটে পালায়। একজন অসুস্থ হয়ে পড়লে অন্যরা তাকে বহন করে বাসস্থানে পৌঁছে দেয়। সেবা-যত্ন করে। তাই অন্যের উপকার করার মানসিকতা আমাদেরও থাকতে হবে। পিঁপড়ার মধ্যে রয়েছে প্রবল গোত্র প্রেম। আমাদের মধ্যেও থাকা উচিত দেশপ্রেম। নিজের দেশের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতিপ্রেম আমাদের এগিয়ে দেবে কয়েক ধাপ।

শৃঙ্খলাবোধ: তারা শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে লাইন করে চলাফেরা করে। মেঝে, মাঠ বা রাস্তা-যেখানেই হাঁটাচলা করে বা খাবার জোগাড় করে, তারা শৃঙ্খলা নিয়ে দলবেঁধে চলাফেরা করে। তাদের দল সমান্তরাল থাকে। এক লাইনে চলতেই থাকে তাদের পথচলা।

ant-cover

বৈরী পরিস্থিতিতে টিকে থাকার প্রবণতা: পিঁপড়া বৈরী পরিস্থিতিতে টিকে থাকার জন্য যথেষ্ট পারদর্শী। শীতকাল তাদের জন্য নিরাপদ নয় বলে তারা গরমকালে জরুরি কাজগুলো সেরে রাখে। যেমন খাবার জোগার, তাদের থাকার নিরাপদ জায়গা ঠিক করা। শীতকালে যেন কষ্ট না হয়, সে জন্য গরমকালে তাদের নিরাপদ বাসস্থান ঠিক করে রাখে। তাদের আক্রমণ না করলে, তারা সাধারণত কামড় দেয় না। আমাদের দেশে সাধারণত দুই ধরনের পিঁপড়া দেখা যায়। লাল ও কালো। দুই ধরনের পিঁপড়া একই রকম বৈশিষ্ট্যের।

ধৈর্য: ছোট এ প্রাণির ধৈর্য প্রবল। ধৈর্যের জন্য দীর্ঘ বছর ধরে দুঃখ-কষ্টের বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকে আছে। বাঘের প্রচণ্ড ক্ষুধা পেলে সে শিকার করতে না পারলে নিজের সন্তানকে পর্যন্ত খেয়ে ফেলে। কিন্তু পিঁপড়া কখনোই এ কাজ করে না। ধৈর্য ধরে শীতকালের খাবার গরমকালে সংরক্ষণ করে। তাই পিঁপড়ার মতো আমাদেরও দরকার ধৈর্য। জীবনে কষ্ট আসবেই। আমরা যদি বিপদে ধৈর্য ধরার চেষ্টা করি, তাহলে আমরা বহুবিধ সমস্যার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার শক্তি পাবো।

রুটিন মেনে চলে: ক্ষুদ্র এ প্রাণি রুটিন মেনে চলে। তাদের সবার কাজ ভাগ করে দেওয়া থাকে। তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা করে। ক্লান্তি তাদের পেছনে ফেলতে পারে না। তাই আমাদেরও পিঁপড়ার মতো পরিশ্রমী হতে হবে। সব সময় ইতিবাচক চিন্তা করতে হবে। আমরা যদি অমাদের কাজ, চিন্তা, চেতনায় সততা এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারি, তাহলে আমরা আরও এগিয়ে যেতে পারবো।

ডেঙ্গু জ্বর ও করণীয়

ডেঙ্গু জ্বর ছোট-বড় সবার জন্য হুমকিস্বরূপ। ছোটদেরও ডেঙ্গু জ্বর হয়। ডেঙ্গু জ্বর একধরনের ভাইরাসজনিত জ্বর। এই জ্বর এডিস এজেপটি নামক একধরনের স্ত্রী মশার কামড়ে হয়।

একজন রোগী থেকে অন্য রোগীতে এ জ্বর সংক্রামিত হয় না। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। এবার শিশুরাও অনেক বেশি পরিমাণে আক্রান্ত গত বছরের তুলনায়।

 অবস্থা খারাপ মনে হলে, শিশুকে বাসায় না রেখে, দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করান। অনেক সময় রক্তপাত হলে, রক্ত দিতে হয়। তাই অবস্থা আশঙ্কাজনক হবার পূর্বেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন 

বড়দের সাথে শিশু রোগীর পরিমাণও বেড়েই চলছে।

শিশু ও বড়দের ক্ষেত্রে ডেঙ্গু জ্বরের কিছু উপসর্গ থাকে একই রকম।

যেমন-

১. জ্বর ১০১ থেকে ১০৫ পর্যন্ত পর্যন্ত উঠে যেতে পারে। জ্বর সাধারণত এক সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হতে পারে। আবার সব সময় উচ্চমাত্রার জ্বর নাও থাকতে পারে। জ্বর ভালো হওয়ার পর থেকে ব্রণের মতো লালচে র‌্যাশ বের হতে পারে। র‌্যাশ অনেকের শরীরে ঘামাচি দানার মতোও হয়। এ বছর রোগীদের শরীরে ঘামাচির মতো লালচে দানা গতবারের তুলনায় কম।

২. খাবারে অরুচি, বমি বমি ভাব, পেটে ব্যথা, অ্যাসিডিটিও থাকতে পারে। অনেকের বমির পরিমাণ বেশি হয়। খাবারে গন্ধ লাগে।

৩. পুরো দেহের হাড়ে বা জয়েন্টে জয়েন্টে ভয়ানক ব্যথা হয়। এ জ্বরের আরো একটি নাম হলো ব্রেক বোন ফিভার ( Break bone fever)। হাড় ভেঙে যাওয়ার মতো পুরো শরীরে ব্যথা হয়।

৪. রোগীর খুব দুর্বল লাগে। পানিশূন্যতা হতে পারে।

৫. ডেঙ্গু জ্বর ভয়ানক খারাপ পর্যায়ে চলে গেলে ব্লাড প্রেশার দ্রুত কমতে থাকে। রোগী শকে পর্যন্ত চলে যায়। হৃৎপিণ্ড, লিভার, কিডনি ফেইলর হয়ে রোগী মারাও যায়। ডেঙ্গু জ্বরের এ খারাপ অবস্থাকে বলে “ডেঙ্গু শক সিনড্রোম।” এ অবস্থায় রক্তপাতও হয়। নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত পড়া, মলের সাথে রক্ত, বমির সাথে রক্ত যেতে পারে।

৬ . এই জ্বরে প্লাটিলেট (রক্তের জরুরি অংশ) দ্রুত কমে যায়। দেহের লবণ পানির অসামঞ্জস্য ঘটে। হৃৎপিণ্ড দ্রুত ওঠানামা করে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের করণীয় 

১. ডেঙ্গু জ্বরের জন্য অপরাধী হলো এডিস মশা। এই মশা নোংরা পানিতে বাসা বাঁধে। তাই পুরনো যেসব জিনিসে পানি জমতে পারে, যেমন- ফুলদানি, ফুলের টব, এসি ফ্রিজের পেছনের অংশ, বাথরুমে বালতি বা হাঁড়িতে, কমোডের আশপাশে যেন পানি জমে না  থাকে, সেই চেষ্টা করতে হবে। জমে থাকা পানিতে ডেঙ্গু মশা বাসা বাঁধে।

গাড়ির যন্ত্রপাতিও খেয়াল রাখতে হবে। ময়লা পানি জমে থাকতে পারে। শিশুদের খেলনার মধ্যে যেন পানি জমে না থাকে।

২. বাসার চারপাশে মশাবিরোধী নেট, ঘরের কোণায় মশানিরোধক যন্ত্র ব্যবহার করবেন। জানালার কার্নিশে অনেক সময় ময়লা ভাঙাচোরা জিনিসে যেন পানি জমে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

৩. পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। কমোডের আশপাশের জায়গা পরিষ্কার রাখতে হবে।

৪. শিশুর জ্বরের মাত্রা কমানোর জন্য বার বার ভেজা কাপড় দিয়ে স্পঞ্জ করতে হবে। তরল খাবার ফলের রস বেশি করে খেতে হবে। জ্বরের মাত্রা বেশি হলে শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

৫. প্লাটিলেটের মাত্রা কতোটা কমে গেছে তা নির্ণয় করতে হবে (সিবিসি/রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে)।

৬. দেহের কোথাও র‌্যাশ ঘা হয়েছে কিনা, অবশ্যই খেয়াল রাখবেন।

৭. শিশুর নাক, মুখ, মল, বমি দিয়ে রক্ত যাচ্ছে কিনা, পর্যবেক্ষণ করবেন।

৮. অবস্থা খারাপ মনে হলে, শিশুকে বাসায় না রেখে, দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করান। অনেক সময় রক্তপাত হলে, রক্ত দিতে হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ার আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ছোট বা বড় কারো ক্ষেত্রেই ডাইক্লোফেনাক ব্যবহার করা যাবে না। তবে প্যারাসিটামল ব্যবহার করা নিরাপদ।

লেখক : এমবিবিএস,  সিসিডি,  সিকার্ড,  এমপিএইচ।

এইচআর/পিআর

 টাইমলাইন

তবে একলা চলো রে…

চিকিৎসাবিজ্ঞানের প্রতি শৈশব থেকেই আমার দুর্বলতা। মেডিকেলের অ্যাপ্রন আর স্টেথিস্কোপ ছিল আমার স্বপ্ন। তাই শ্বশুরবাড়ির ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমার স্বামী আমাকে ভর্তি করিয়েছিল বেসরকারি একটি মেডিকেল কলেজে।

আমার স্বামী আর বাবা এই পৃথিবীতে আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ। অথচ ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাসে স্বামী আমার সঙ্গে করল চরম অন্যায়-অবিচার। আমাকে জন্ম দিয়েই মারা গেছেন মা; আর মায়ের মৃত্যুর পর বাবা আমাকে উপহার দিয়েছেন অত্যাচারী সৎ মা।

 ছবি দেখে মনে হলো পার্থর চেয়ে বয়সে অনেক বড় বিদেশী এক মহিলা। বিদেশী নাগরিকত্ব পাবার জন্য সে নাকি নিজের থেকে ২২ বছরের বড় মহিলাকে বিয়ে করেছে। পৃথিবীর কোনো স্বামী যেন তার স্ত্রীকে বিবাহবার্ষিকীতে এমন উপহার না দেয়। 

সেই বাবাও আজ পরপারে। এত বড় পৃথিবীতে আপন আজ শুধু আমার সন্তান। কথুগুলো এক অসহায় স্ত্রীর, যিনি পেশায় চিকিৎসক। পাঠক, আজ আমরা শুনবো ভাগ্যবিড়ম্বিত মেয়েটির (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) কণ্ঠে তাঁর জীবনের অভিজ্ঞতা।

সেই চিকিৎসক এই লেখককে বলেন, ‘অভাবের সংসারে আমি ছিলাম সৎ মায়ের বোঝা। তাই এইচএসসির ফলাফল বের হওয়ার আগেই বিয়ে দিয়ে দিল। ফলাফল ভালো দেখে আমার স্বামী সিদ্ধান্ত নিল আমাকে পড়ানোর। কিন্তু বিয়ের প্রথম বছরই হয়ে গেলাম মা।

সংসারের কাজের চাপে ঠিকমতো হলো না প্রস্তুতি। সরকারি মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ হারাতে হলো। শ্বশুরবাড়ির সবার সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধ করে স্বামী আমাকে ভর্তি করাল বেসরকারি মেডিকেল কলেজে।

আমাদের দাম্পত্য সুখ সৎ মা আর শ্বশুরবাড়ির সবার জন্য হয়েছিল চরম যন্ত্রণার বিষয়। তারা নানা রকম বিশ্রী পরিস্থিতি সৃষ্টি করে আমাদের দাম্পত্য কলহ বাধানোর জন্য। কিন্তু আমাদের পরস্পরের বিশ্বাসের কাজে পরাজিত হতো তারা। তারা চাইত না আমার নামের আগে যুক্ত হোক ‘ডা.’ নামের শব্দটি।

যৌথ পরিবার থেকে আমার স্বামী অজস্রবার চেয়েছিল আলাদা হতে। কিন্তু আমিই তা হতে দিইনি। সবাই মিলেমিশে থাকার মধ্যেই প্রকৃত সুখ। কিন্তু সে সুখ আর রইল না আমার ভাগ্যে। এক আত্মীয়ের মাধ্যমে আমার স্বামী উন্নত ভবিষ্যতের আশায় চলে গেল ইউরোপ। তার নিয়মিত যোগাযোগে মনে হতো না সে হাজার মাইল দূরে। কিন্তু যতই দিন যেতে লাগল, বদলাতে থাকল তার আচরণ।

আমার সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দিয়ে নিয়মিত যোগাযোগ করত সৎ মা আর শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে। একপর্যায়ে কমতে থাকল প্রতি মাসে পাঠানো টাকার পরিমাণ। একসময় সেটিও বন্ধ করে দিল। বাচ্চা আর আমার খরচ চালানোই দায় হয়ে উঠল তখন। টাকা পাঠাতে শুরু করল আমার সৎ মাকে। শত চেষ্টা করেও পেতাম না কোনো উত্তর। মোবাইল ফোনে অসংখ্য মেসেজ পাঠিয়েও হতো না কোনো কাজ।

একসময় সে ইউরোপে এক বিদেশী নারীকে বিয়ে করল। আমার জীবন এমন নাটকীয়তায় ভরে যাবে, এ আমি কোনে দিন ভাবিনি!

ভাশুরদের চক্রান্তে আমি বাসা ছাড়তে বাধ্য হলাম। আমার বাবার ঘরেও হলো না ঠাঁই। পৈতৃক সম্পত্তি জালিয়াতি করে অনেক আগেই নিয়েছিল সৎ মা। তখনো চিকিৎসক হইনি। অভাব আর মানসিক যন্ত্রণা আমার গলা চেপে ধরল। কষ্টের সাগরে দিশেহারা হয়ে পড়লাম আমি। আশার আলো হয়ে হাত বাড়িয়ে দিলেন আমার স্কুলজীবনের এক শিক্ষিকা। তাঁর বাসা সাবলেট নিয়ে রইলাম আমি। কমবয়সী মেয়ে হওয়ার দোষে কোথাও বাড়ি ভাড়া পেলাম না। আর ভাড়া দেওয়ার সামর্থ্যও আমার ছিল না।

বিভিন্ন সময় অর্থ ও মানসিক সাহায্য দিয়ে আমার জীবনে তিনি আজ বটবৃক্ষের মতো। তাঁর প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। প্রথম দিকে কাজের বুয়া রাখার সামর্থ্যও ছিল না। আমার বাচ্চাকে তিনিই দেখে রাখতেন। এভাবে মানসিক টানাহেঁচড়ায় অর্জন করলাম এমবিবিএস ডিগ্রি। ফলাফল হাতে পেয়েই স্বামীকে মেসেজ পাঠালাম। দীর্ঘ কয়েক মাস পর পেলাম মেসেজের উত্তর। তাতে লেখা, “তুমি আমার কাছে মৃত। আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করবা না।”

দুই লাইনের এই মেসেজে কান্নায় ভেঙে পড়লাম আমি। কিছুদিন আগে ছিল আমাদের বিবাহবার্ষিকী। বিবাহবার্ষিকীতে পার্থর (ছদ্মনাম) পাঠানো পার্সেলে ছিল মাঝারি আকৃতির একটি ফ্রেম। তাতে বাঁধাই করা স্বামী-স্ত্রীর ছবি। ছবির পেছনে বড় করে লেখা- মি. অ্যান্ড মিসেস পার্থ। ছবি দেখে মনে হলো পার্থর চেয়ে বয়সে অনেক বড় বিদেশী এক মহিলা। বিদেশী নাগরিকত্ব পাবার জন্য সে নাকি নিজের থেকে ২২ বছরের বড় মহিলাকে বিয়ে করেছে। পৃথিবীর কোনো স্বামী যেন তার স্ত্রীকে বিবাহবার্ষিকীতে এমন উপহার না দেয়। অনেকবার মনে করি পার্থকে ভুলে যাব। কিন্তু বাচ্চাটার জন্যই প্রতিমুহূর্তে অনুভব করি তার বাবার শূন্যতা।

পার্থ আমার কথা নাই-ই বা ভাবল, সন্তানটার কথা ভাবতে পারতো। টাকার জন্য আমি দুটো হাসপাতালে চাকরি করি। মাঝেমধ্যে থাকে নাইট ডিউটি। আমার কষ্টকে নিজের হিসেবে উপলব্ধি করেন এই আপা। পার্থ, তুমি যেখানেই থাক না কেন, এ প্রতিবেদন তোমার চোখে পড়বেই।

তুমি আমাকে যে কষ্ট দিয়েছ, তার কোন ক্ষমা নেই। তোমার বিরুদ্ধে আইন-আদালাতে যেতে আমার ঘৃণা হয়। জেনে রেখো, তোমার স্ত্রী ছিল সম্পূর্ণ নিরপরাধ। পার্থ, শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে। তুমি আমার চোখের পানি যতোটা ঝরিয়েছো, তাদের কয়েকগুণ পরিমাণ তোমাকে কাঁদতে হবে।

ভুক্তভোগী এই নারী চান না তাঁর মতো হোক কোন মেয়ের জীবন। তিনি সব নারীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে…।’

লেখক : চিকিৎসক।

এইচআর/এমকেএইচ

করোনা ভাইরাসের কারণে বদলে গেছে আমাদের জীবন। আনন্দ-বেদনায়, সংকটে, উৎকণ্ঠায় কাটছে সময়। আপনার সময় কাটছে কিভাবে? লিখতে পারেন জাগো নিউজে। আজই পাঠিয়ে দিন – jagofeature@gmail.com

ধূসর জীবনের গল্প

সবার উত্তেজনামিশ্রিত মধুর প্রতীক্ষাটি শেষ হলো। অপারেশন থিয়েটারের লাল লাইটটি নিভে গেল। চিকিৎসক বয়ে আনলেন মেয়েসন্তান জন্মের বার্তা। মেয়ে জন্মানোর দুঃখে পাষাণ বাবা গৃহত্যাগ করলেন। সেই বাবা আজও ফিরে আসেন নি। চরম দুর্দশা ও নির্যাতনের শিকার হলেন মা ও শিশুটি।

 ‘এদেশ থেকে নির্মূল হোক নারী নির্যাতন, আমরা কোনো নারীর ধূসর জীবন চাই না। প্রতিটি নারীর সাফল্য হোক আগামী সূর্যোদয়ের মতো উজ্জ্বল। নারী পুরুষের সম্মিলিত সফলতায় গড়ে উঠুক সোনার বাংলাদেশ।’ 

ফুল হয়ে সুরভি ছড়ানোর আগেই অকালে ঝরে যাচ্ছেন অনেক নারী। এ দেশের অজস্র নারী এখানো বিভিন্নভাবে পারিবারিক, অর্থনৈতিক দিক দিয়ে নির্যাতিত হচ্ছেন। যা কখনোই কাম্য নয়। আর এই পরিসংখ্যান শহরের তুলনায় গ্রামে খুব বেশি ভয়ানক। শুধু শহরের নারীরা এগিয়ে গেলে হবে না, গ্রামাঞ্চলের নারীদেরকেও এগিয়ে যেতে হবে। পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী নারী মানে দেশের সুযোগ্য নাগরিক, একটি সন্তানের সুযোগ্য মা, একটি শিশুকে সুযোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার কারিগর।

প্রতিবছর ২৫ নভেম্বর আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিবাদ দিবস পালন করা হয়। দিবসটির উদ্দেশ্য সফলের জন্য বিভিন্ন সভা, সেমিনার, পরিকল্পনা প্রণয়ন হয়। আমাদের সবার উচিত সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ গড়ে তোলা। তা না হলে নির্যাতন মহামারির রূপ নেবে। আর সেই আগুনে জ্বলে যাবে আমাদেরই প্রিয়জনের ঘর। প্রিয় পাঠক, আজ আমরা শুনব এমনই কয়েকজন ভাগ্যহীনার কথা, যাদের ধূসর জীবন হয়ে গেছে ঝরাপাতা।

কেস স্টাডি-০১
ওষুধ কোম্পানিতে চাকরিরত শান্তা (ছদ্মনাম) বলেন, ‘এম এ পাসের দীর্ঘ তিন বছর পর অনেক কষ্টে চাকরি পেয়েছি। আমার চরিত্রহীন বসের কুদৃষ্টি, নোংরা আচরণ সত্ত্বেও চাকরি ছাড়তে পারছি না। মৃত বাবার সংসারে আমিই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। স্কুল-কলেজগামী চার ভাইবোনের খরচ আমাকেই চালাতে হয়। সামান্য বেতনে কলুর বলদের মতো কাজ করি।

বসের আতঙ্কে কাজে মনোযোগ দিতে পারি না। অকারণে বস আমাকে তাঁর রুমে বারবার ডেকে পাঠায়। ভয়ে আমার রক্ত জমাট বেঁধে যায়। মানুষ নামের ওই প্রাণীটি অসংখ্য বড় বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ক্ষমতার জোরে আমার মতো অসংখ্য অসহায়কে নির্যাতন করেন তিনি। নতুন কোথাও চাকরির জন্য প্রতিদিন পথ চেয়ে থাকি।’

কেস স্টাডি-২
কাজের বুয়া মোমেনার (ছদ্মনাম) বাবা বলেন, ‘পেটের দায়ে কাজ করতে গিয়ে গৃহকর্তার নির্যাতনের শিকার হয় আমার মেয়ে। গৃহকত্রীর চোখের আড়ালে তাকে গর্ভবতী বানিয়ে দেয়। পাঁচ মাসের গর্ভস্থ শিশুকে নষ্ট করতে গিয়ে আমার মেয়ে চলে গেল না ফেরার দেশে।

অর্থাভাবে আমাদের ভাগ্যে মেলেনি আইনের আশ্রয় অথচ বুকে আশ্রয় নিয়েছে ব্যথার জগদ্দল পাথর।’ সেই চরিত্রহীন পুরুষটা সবাইকে বলে বেড়াচ্ছে, আমার মেয়ে নাকি চরিত্রহীন। জানি, মানুষের আদালতে ঐ পশুটার কোনদিন বিচার হবে না, আল্লাহ আদালতে তার বিচার হবেই।

কেস স্টাডি-৩
রাজধানীর রায়ের বাজারের মধ্যবিত্ত ব্যবসায়ীর স্ত্রী মহুয়া সেন (ছদ্মনাম) বলেন, ‘দীর্ধ পাঁচ বছরের প্রেমে বসেছিলাম বিয়ের পিঁড়িতে। অথচ বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই দুচোখ ভরা স্বপ্নগুলো ভেঙে গেল বালির বাঁধের মতো। যৌতুকের জন্য স্বামীর কাছে থেকে পেতাম অশ্রাব্য ভাষার গালি আর শারীরিক নির্যাতন। এতে তার মা, ভাইবোনদেরও সমর্থন ছিল। অথচ প্রেম করে, পরিবারের অমতে বিয়ে করেছিলাম। আমার পঙ্গু বাবার সংসারে আমিই বড় সন্তান।

আমার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আমার মা তার শাশুড়ির দেওয়া একমাত্র সীতাহারটি (গলার মালা) গোপনে বিক্রি করে দিয়েছেন। সীতাহারের পুরো টাকাটা স্বামীর হাতে তুলে দিয়েছি। তবু লোভের শেষ নেই, আরও চায়। আমার স্বামীর ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বাসায় কাজের বুয়া রাখতে দেয় না, দোতলা বাড়ির পুরো কাজ আমাকেই করতে হয়।

রাতে খাই দুপুরের খাবার আর গভীর রাতে খাই স্বামীর মার। লজ্জায়-দুঃখে মুখ গুঁজি বালিশে। আমার কান্না দেখে তিন বছরের কন্যাসন্তানটিও কাঁদতে থাকে। এমন অত্যাচারী মানুষের কাছে আমার একদিনও ইচ্ছা করে না, শুধু আমার সন্তানের জন্যই থাকি। আমি অষ্টম শ্রেণি পাস। চাকরিও তো পাব না, পঙ্গু বাবার সংসারে আমি আর বোঝা হতে চাই না। আমি চাই, আমার মেয়েটা লেখাপড়া শিখে শক্ত-সমর্থ হোক, এ সমাজ তাঁকে সম্মান করুক। কোনো নারীকে যেন আমার মতো নির্যাতন সহ্য করতে না হয়।’

কথাগুলো বলতে গিয়ে নির্যাতিতা মহুয়া সেনের দুচোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিল শ্রাবণধারা। দুচোখের রক্তিম বর্ণ কপালের সিঁদুরকেও হার মানিয়েছিল।

আজকের নারী আগামী দিনের মা, একটা পরিবারের মূল চালিকাশক্তি। জাতির স্বার্থেই নারী নির্যাতন রোধ করতে হবে। আমরা চাই নারী নির্যাতনমুক্ত বাংলাদেশ এবং নারী-পুরুষের সমান অধিকার। সমাজের সঠিক বিকাশ।’ বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের মতামতের ভিত্তিতে নির্যাতন প্রতিরোধে আমার করণীয়-

১. সরকারি ও বেসরকারি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সংস্থাগুলোকে আরও কার্যকর হতে হবে। নির্যাতন প্রতিরোধ সংক্রান্ত আইন ও তার প্রতিকার বিষয়ক লিফলেট বিতরণ করতে হবে।
২. নারী নির্যাতন বিষয়ে গবেষণা বাড়িয়ে জনমত তৈরি করতে হবে। নারীর জীবনের নানা তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করে সমাজে নারীবান্ধব নীতি বাড়াতে হবে।
৩. গণযোগাযোগ মাধ্যম যেমন- টিভি, রেডিও, সংবাদপত্রগুলোকে প্রচুর পরিমাণে নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।
৪. অশিক্ষিত ও দরিদ্র নারীরাই নির্যাতনের শিকার হন বেশি। তারা যেন বিনামূল্যে নির্যাতনের প্রতিকার ও আইনের সুবিধা পায় তার জন্য সরকারকে আরও কর্মতৎপর হওয়া প্রয়োজন।
৫. জাত, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে প্রতিটি নারীকে শিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত হওয়া একান্ত জরুরি। প্রতিটি মানুষের উচিত নারীকে সর্বপ্রথমে মানুষ হিসেবে গণ্য করা এবং পুরুষের সমপর্যায়ে সুযোগ দেওয়া।
৬. আজকাল পাঁচ বছরের শিশুও নির্যাতিত হচ্ছে। ছোটবেলা থেকেই শিশুদের মধ্যে প্রতিরোধমূলক মনোভাব গড়ার জন্য মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ বইয়ে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ বিষয়ক পাঠ্যসূচি থাকা অপরিহার্য।
৭. স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে নিয়মিত গোলটেবিল বৈঠক হওয়া প্রয়োজন, এতে দ্রুত গণসচেতনতা বাড়বে।

এদেশ থেকে নির্মূল হোক নারী নির্যাতন, আমরা কোনো নারীর ধূসর জীবন চাই না। প্রতিটি নারীর সাফল্য হোক আগামী সূর্যোদয়ের মতো উজ্জ্বল। নারী পুরুষের সম্মিলিত সফলতায় গড়ে উঠুক সোনার বাংলাদেশ।

লেখক : চিকিৎসক।