“সিড়ি বেয়ে ওঠা নামার গুরুত্ব “

করােনা ভাইরাসের জন্য সারা পৃথিবীর অসংখ্য মানুষ লকডাউনে ছিল। এই ভাইরাসের প্রভাবে অনেক মানুষ একই সাথে শারীরিক ও মানসিক সমস্যার শিকার। দীর্ঘ দিন গৃহে বন্দী থাকার জন্য অনেকই আক্রান্ত হয়েছেন বিভিন্ন ধরনের মেটাবলিক অসুখে। যেমন ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেশার, ওবিসিটি সহ বহুবিধ সমস্যা। অনেকেই হারিয়েছেন চাকরি, অগণিত মানুষ এই ভাইরাসের জন্য অর্থনৈতিকভাবে ভীষণ বিপদের শিকার। ছাএ ছাএীদের লেখাপড়াতেও এসেছে অনেক পরিবর্তন। তারা দীর্ঘ দিন থেকে গৃহবন্দী। হাটাচলার অভাব, শারীরিক পরিশ্রম এর অভাবে তাদের অনেকের ওজন বেড়ে গেছে। বাড়ন্ত শিশুদের বৃদ্ধিতেও তৈরী হয়েছে বাধা। বর্তমানে আমাদের দেশে চলছে করােনা ভাইরাসের ২য় ঢেউ। আমাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শারীরিক পরিশ্রম করার। চেষ্টা করতে হবে। রাজধানী ঢাকার কথা যদি বলি, আমরা এই শহরে গৃহবন্দী হিসেবে দিন পার করি। ফ্লাট বাসার বেলকোনি গুলােও খুব ছােট। নেয় কোন খেলার মাঠ। শিশু থেকে ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত সবাই ইন্টারনেটে লেখাপড়া করছে। এই অবস্থা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কারণ ছােট বড় প্রায় সবারই শারীরিক পরিশ্রম কমে গেছে। চেষ্টা করতে হবে লিফট পরিহার করে সিড়ি বেয়ে ওঠানামা করার জন্য। বাসা, অফিস, শপিং মল সহ জরুরী কাজের জায়গাতেও যতােটা সম্ভব লিফট পরিহার করতে হবে। নিয়মিত লিফট ব্যবহার করতে করতে এক সময় মানুষ সিড়ি বেয়ে ওঠার অভ্যাস হারিয়ে ফেলে। যা মােটেও কাম্য। নয়। সিড়ি দিয়ে ওঠা স্বাস্থ্যের জন্য যথেষ্ট উপকারী। তবে অবশ্যই দশ বা বারাে তলা পর্যন্ত নয়। চার থেকে পাঁচ তলা পর্যন্ত সিড়ি বেয়ে ওঠা উত্তম। সিড়ি দিয়ে উঠা নামা করলে হৃৎপিন্ডে সঠিক ভাবে রক্ত চলাচল করে।

হৃৎপিন্ড দেহের ভীষণ জরুরী অঙ্গ। পুরাে দেহে রক্ত সরবরাহ করা হৃৎপিন্ডের কাজ। সিড়ি দিয়ে ওঠা নামা করলে বা নিয়মিত হাটলে, পুরাে দেহে অক্সিজেন সরবরাহের মাত্রা বেড়ে যায়। দেহের শিরা উপশিরার মধ্যে অক্সিজেনের মাত্রা | বেড়ে গেলে, সারা শরীরে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের সরবরাহ বেড়ে যায়। ফলে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত দেহের প্রতিটি
অঙ্গে পৌঁছে যায়। এতে দেহের রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা বাড়ে এবং হৃৎপিন্ডও ভালাে থাকে। | এবং মস্তিস্কেও রক্ত সরবরাহ হয়। মস্তিস্কে অক্সিজেন লেভেল এর মাত্রা বেড়ে যাবার জন্য মস্তিস্কের শিরা উপশিরাও সঠিকভাবে কাজ করে। যারা ওজন নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করছেন, তারা লিফটের পরিবর্তে সিড়ি ব্যবহার করার চেষ্টা করেন। তবে হৃদরােগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত সিড়ি দিয়ে বেশী ওপরে উঠবেননা। | কোন অপারেশনের পরে চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত, ওজন কমানাের আশা বা হৃৎপিন্ড ভালাে রাখার জন্য সিড়ি ব্যবহার করবেন না। গর্ভাবস্থায় শেষের দিকে বা যেসব গর্ভবতী মায়েদের রক্তপাত হয়, তারা সিড়ি পরিহার করাই ভালাে।। পেন্সিল হিল পড়ে আট বা দশ তলা সিড়ি দিয়ে ওঠা অনুচিৎ। আপনার জানা মতে হৃদরােগ না থাকলে, লিফট এর পরিবর্তে সিড়ি ব্যবহার করবেন। | দৈহিক পরিশ্রম করলে আমরা যখন ঘেমে যাই, তখন ঘামের মাধ্যমে আমাদের দেহ থেকে অনেক রােগ জীবাণু শরীর থেকে বের হয়ে যায়। সিড়ি দিয়ে ওঠা নামা করলে শ্বাস প্রশ্বাস জোরে জোরে হয়। তখন হৃদপিন্ডও ভালােভাবে কাজ করে। তাই লিফটের পরিবর্তে যতােটা সম্ভব সিড়ি ব্যবহার করবেন। শিশুদেরকেও সিড়ি বেয়ে ওঠানামার প্রশিক্ষন দিতে হবে। তারা বাসা, স্কুল, শপিং মল অধিকাংশ জায়গায় লিফট দিয়ে চলাচল করে। পরিণামে আক্রান্ত হচ্ছে ওবিসিটি ( ওজন বৃদ্ধির অসুখ) তে। বড়দের মতাে তাদেরও রােগ প্রতিরােধ শক্তি কমে যাচ্ছে। ছােটরাও এগিয়ে যাচ্ছে টাইপ টু ডায়াবেটিস এর দিকে। বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী অতিরিক্ত ওজন ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেশার এর দায়ী। রক্তে চর্বির মাত্রা কমানাের জন্যও লিফট দিয়ে চলাচল এর পরিবর্তে সিড়ি বেয়ে ওঠানামা ভীষণ জরুরী।
ফারহানা মােবিন।
চিকিৎসক, লেখক ও উপস্থাপিকা

0 replies

Leave a Reply

Want to join the discussion?
Feel free to contribute!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *